চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে গেল। সকলেই কিছু কিছু জমিজমা যোগাড় ক’রে পায়ের ওপর পা দিয়ে ব’সে খাবার বন্দোবস্ত কর্তে লাগ্ল। এই ‘পায়ের ওপর পা দিয়ে ব’সে খাওয়া’ কথাটি এখনও দেশে চরম সুখের পরিচায়ক। কিন্তু সবাই মিলে ব’সে খেতে চাইলে চল্বে কেন? যেমন য়ুরোপের কল্কারখানা এসে আমাদের জোরে ধাক্কা দিল, অমনই ব’সে খাবার সুখ ঘুচে গেল, আর ব’সে খাওয়ার প্রবৃত্তিজনিত অলসতা আমাদের সর্ব্বনাশ কর্লে। আবার যাঁদের টাকা জমেছে তাঁরা হয় কোম্পানীর কাগজ বা মহাজনী কর্বেন, নয় জমিদারী কিন্বেন এবং বংশানুক্রমে তা ভোগ কর্বেন; এছাড়া টাকা খাটাবার অন্য কোন মৎলব নেই। কাজেই বাঙালীর ব্যবসায়ে প্রবৃত্তি হয়নি। বরং এই সকল কারণে আমাদের মধ্যে অলসতা, শ্রমবিমুখতা, ও বিলাসপরায়ণতা প্রভৃতি দোষ প্রবেশ করেছে। বাঙ্লার বারভূঁইয়া জমিদার ছিলেন। জমিদারী ও চাক্রী নবাবী আমল থেকে বাঙালীর রক্তে ও ধমনীতে। কিন্তু এখন আর ওপথে গেলে চল্বে না। ডিগ্রী ও চাক্রীর মোহ, জলহাওয়া ও অভ্যাসের দোষ, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের বলে ছাড়িয়ে উঠ্তে হবে। অনেকে অভিযোগ কর্ছেন—আমি লেখাপড়া ঘুচিয়ে দিয়ে বাঙালীর ছেলেকে মাড়োয়ারী হ’তে বলছি। বড় বড় য়ুরোপীয়ান বণিক—তাঁরা কি গণ্ডমুর্খ? তাতা, বিঠলদাস, ইব্রাহিম করিমভাই—এঁরা কি গণ্ডমুর্খ? লেখাপড়ার অভাবে মাড়োয়ারী এদের মত হতে পারেনি, মাড়োয়ায়ী ব্যবসা শিখলেও শিল্পপ্রতিষ্ঠায় কোন কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি। লেখাপড়া ও ব্যবসা বাণিজ্য পরস্পর-বিরোধী নয়। আমি মাড়োয়ারীকে বল্ব ব্যবসার সঙ্গে লেখাপড়া শেখো; আর বাঙালীকে বল্ব—ব্যবসা কর চাক্রীর মায়া ছাড়।
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১০৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্নসমস্যা
৭৩