কুমোরের কাজ কুমোরকে সঁপিয়া দিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া ইংরেজ আমলে বিদ্যাচর্চ্চায় লাগিয়া গেলাম। আমরা senior, junior scholar হইলাম। এখন প্রথম প্রথম বি-এ পাশ করিলাম সাত গাঁয়ের লোক ছুটিয়া আসিল আমাদের দেখিতে। আর যদি এম্-এ পাশ করিলাম তো হইয়া পড়িলাম ছোট-খাট এক দেবতা। এই করিয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা যাঁহারা সব দেশে এবং সব জাতির সর্ব্ববিধ উন্নতির মূল তাঁহারা ইংরেজী ডিগ্রির নিকট দাসখত লিখিয়া দিয়াছেন। আর বোম্বাই অঞ্চলে লোকে ব্যবসাবাণিজ্যে লাগিয়া গেল। ওদেরও যে প্রথম বারেই সফলতা হইল,তা নয়। প্রথম প্রথম লোকসান দিয়া যে অভিজ্ঞতা অর্জ্জিত হইল তারই ফলে আজ ওরা এত উন্নত। দিন্শা ওয়াচার প্রণীত সার জম্শেদ্জি তাতার জীবন-চরিত পাঠ করিলে জানা যায় যে, ব্যবসা বাণিজ্য অমনি ধরিলেই হয় না। কত যে একাগ্র সাধনার প্রয়োজন তা এই সমস্ত ধনকুবেরদের জীবন শিক্ষা দেয়।
আজকাল আমাদের দেশে চায়ের ব্যবসায় খুব লাভজনক। কিন্তু এই ব্যবসায়ের ইতিহাস পাঠ করিলে জানা যায় সমগ্র সভ্যজগৎ ও জীবন হইতে দূরে একান্তে যখন দলে দলে শ্বেতাঙ্গ চা-করেরা (planter) গিয়া আবাদ আরম্ভ করিল তখন শতকরা কতজন কালাজ্বর ম্যালেরিয়াতে মারা গেল। ও অঞ্চলে গেলে কতশত ইংরেজের কবর দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু উদ্যম ওদের এত অল্প বাধাতেই নষ্ট হয় না। তারা কুইনাইন খাইয়া মশা তাড়াইবার জন্য বাড়ীঘর লোহার জাল দিয়া ঘিরিয়া কাজ শুরু করিল। সেই লর্ড ডালহৌসির সময় হইতে চেষ্টা করিয়া আজ এতদিনে এর সুফল ফলিয়াছে। ইহার ফলভোগ করিবার তাদের নিশ্চয়ই একটা দাবী দাঁড়াইয়াছে। এইরূপে নিয়তই বিরুদ্ধপ্রকৃতির ও প্রতিকূল বাধার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া ইংরেজ লক্ষ্মীকে অঙ্কশায়িনী করিয়াছে।