কুব্জাধিপতি হর্ষবর্দ্ধন শৈব হইলেও বৌদ্ধভাবাপন্ন ছিলেন। বস্তুতঃ তখন কান্যকুব্জ হইতে বঙ্গদেশ পর্য্যন্ত আর্য্যাবর্ত্তের সমুদায় অংশেই বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ছিল। কাজেই তখন জাতিপ্রথা একেবারে উঠিয়া না গেলেও ভিন্ন ভিন্ন জাতির মধ্যে বিবাহাদি চলিত তাহা বলাই বাহুল্য।
তৎপরে বৌদ্ধধর্ম্মের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুধর্ম্মের পুনরাবির্ভাব ঘটে। তখন পুনরায় জাতিপ্রথার উন্নতি হইতে দেখা যায়। কৌলিন্যপ্রথার প্রবর্ত্তক রাজা বল্লাল সেন জাতিপ্রথার মস্ত পৃষ্ঠপোষক হইয়া উঠিলেন, সময় বুঝিয়া অনেকেই বুদ্ধিমানের মত তাঁহাকে সমর্থন করিয়া সমাজে উন্নতিলাভ করিতে লাগিলেন এবং সুবর্ণবণিক, যুগী প্রভৃতি, যাঁহারা তাহা না পারিলেন, তাঁহারা নীচশ্রেণীর মধ্যে পরিগণিত হইলেন।
পরবর্ত্তীকালে একটি কিম্বদন্তীর প্রচার হয় যে যখন বৌদ্ধযুগে বঙ্গদেশে বেদবিহিত ক্রিয়াকলাপের লোপ ঘটিল, তখন রাজা আদিশূর সনাতন ধর্ম্মের পুনঃ প্রচারের জন্য কান্যকুব্জ হইতে পাঁচটি বিদ্বান ব্রাহ্মণ আমদানী করেন।
ধরিয়া লওয়া যাক যে উপরোক্ত কিম্বদন্তীর মূলে কিছু সত্য আছে, তবুও একথা নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে যে বর্ত্তমান বাঙ্গালায় ১৩ লক্ষ ব্রাহ্মণের মধ্যে কয়জন সেই পাঁচজন মাত্র পূর্ব্বপুরুষের বংশধর বলিয়া দাবী করিতে পারেন। আরও মজার কথা এই যে সেই পূর্ব্বপুরুষগণ তাঁহাদের স্ত্রী সঙ্গে লইয়া আসেন নাই। বারেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির একনিষ্ঠ সভ্য শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ মহাশয় যথার্থই বলিয়াছেন— “রাঢ়ী ও বারেন্দ্র ব্রাহ্মণের কুলশাস্ত্রে বিশ্বাস করিবার আর একটি বাধা এই যে ইহাতে ধরিয়া লইতে হয় যে ৩০ হইতে ৩৫ পুরুষ পূর্ব্বে অর্থাৎ ৮ হইতে ১০ শতাব্দী পূর্ব্বে বাঙ্গালায় ব্রাহ্মণ ছিল না বলিলেই হয়। রাঢ়ীগণের কুলশাস্ত্রে লিখে যে, যে-সময়ে কনৌজ হইতে পঞ্চ