ঘটিয়াছিল। সেই জন্যই এই সময়ের লিখিত পুরাণগুলির মধ্যে একটা হতাশার এবং ভয়ের সুর শুনিতে পাই। যাহা হউক অন্ততঃ ইহা নিশ্চিত যে বৌদ্ধধর্ম্মের উত্থানের জন্য হিন্দুধর্ম্মের যে পতন হয়, সেই পতন হইতে ইহা আবার যখন পুনরুত্থান করে তখন ইহা আর তাহার প্রাচীন বিশুদ্ধি রক্ষা করিতে পারে নাই—আজকাল হিন্দুধর্ম্মকে আমরা যেরূপ ভেজাল-মিশ্রিত অবস্থায় দেখিতেছি, সেই অবস্থাই প্রাপ্ত হয়। বৌদ্ধধর্ম্মকে এবং পরে জৈনধর্ম্মকে বিনষ্ট করিবার জন্য ব্রাহ্মণগণ প্রথম যে সকল বর্ব্বর জাতিকে শূদ্র বলিয়া ঘৃণা করিতেন, পরে তাহাদিগেরই সহিত মিলিত হন। যে সকল ব্রাহ্মণ প্রথমে ঋষি এবং ধর্ম্ম প্রচারক, কবি এবং দার্শনিক ছিলেন, তাঁহারা পুরোহিত-শ্রেণীতে অবনত হইলেন এবং এইরূপে ক্ষমতা এবং লাভের জন্য তাঁহাদের স্বাধীনতা বিসর্জ্জন দিলেন। দস্যু এবং রাক্ষসগণের দেব দেবীগণকে প্রাচীন বৈদিক দেবতাগণের রূপান্তররূপে গ্রহণ করা হইল; পূর্ব্বে আর্য্য ও অনার্য্যদিগের মধ্যে যে বিভাগ ছিল, পরে তাহা ব্যবসাগত নানা জাতিতে পরিণত হইল এবং এই জাতিগণের মধ্যে কোন সম্পর্কই রহিল না। ব্রাহ্মণ্যধর্ম্ম অসভ্য জাতিগণকে সভ্য করিতে পারিল না, বরং তাহাদিগের দ্বারা নিজেই হীনতা প্রাপ্ত হইল।”
তবে কেন এত বংশমর্য্যাদার বড়াই? তবে কেন কেহ আপনাকে সূর্য্য ও চন্দ্রের বংশধর বলিয়া কেহ বা আপনাকে বৈদিক ঋষিগণের সন্তান বলিয়া প্রমাণ করিতে এত ব্যস্ত?
বর্ত্তমান কালে হিন্দুসমাজে লোকাচারই ধর্ম্মের স্থান অধিকার করিয়া বসিয়াছে। মনুসংহিতা, পরাশরসংহিতা ও মহাভারতাদি পাঠে দেখা যায় যে, প্রাচীন ঋষিগণ, রঘুনন্দন প্রভৃতি নব্য স্মার্ত্তগণের অপেক্ষা