পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমাজ-সংস্কার সমস্যা
১১৭

কোন দোষ নাই। এই ধারণা ভ্রান্ত! বিদেশীদেরও দোষ আছে; কিন্তু প্রথম দোষ ও প্রধান দোষ আমাদের নিজের।

 দেশের সমুদয় পুরুষ নারী, সমুদয় বালক বালিকা লইয়া জাতি। এই-সব মানুষ বা ইহাদের অধিকাংশ হীন হইলেই জাতি হীন হইল।

 আগে হীনতার ধারণাটাই পরিষ্কার হউক। আমাদের দেশে কতকগুলি জা’তকে বলা হয় ভাল জা’ত, উঁচু জা’ত, শ্রেষ্ঠ জা’ত, ইত্যাদি; এবং অপর কতকগুলি জা’তকে বলা হয় নীচ জা’ত; ছোট জা’ত, ছোট লোক, হীন জা’ত প্রভৃতি। শিক্ষিত লোকেরা মোটামুটি জানেন যে এই তথাকথিত হীন জা’তের লোকদের সংখ্যাই বেশী, তথাকথিত উঁচু জাতের লোকদের সংখ্যা কম। সেন্সস্ রিপোর্ট দেখিলে বুঝা যায় যে এই ধারণা সত্য। আচ্ছা, যদি আমরা নিজেই আমাদের জাতির অধিকাংশ জাতের অধিকাংশ লোককে হীন মনে করি, তাহা হইলে আর-সমস্ত জাতিটা হীন হইতে বাকি থাকিল কি? অন্য জাতির লোকেরা, বিদেশী লোকেরা, আমাদিগকে হেয় মনে করিয়া অবজ্ঞা করিলে, আমাদিগের জাতিকে অপমান করিলে, আমরা চটিয়া যাই, এবং চটিয়া যাওয়া কতকটা স্বাভাবিকও বটে; কিন্তু আমরা নিজেই যে আমাদের দেশের কোটি কোটি লোককে “ছোট লোক” নাম দিয়া রাখিয়াছি, তাহাতে দোষ হয় না? তাহাতে আমাদের জাতির অপমান হয় না? ‘হীন’ জাতের লোকদিগকে কেবল যে নামেই হীন বলা হয়, তাহা নয়, সামাজিক ব্যবস্থা তাহাদিগকে, অর্থাৎ দেশের অধিকাংশ লোককে বাস্তবিকই হীন করিয়া রাখিয়াছে।”

 জাতীয় ঐক্যের প্রচারক কি বলিয়াছেন শুনুন:—ভারতবাসীরা বাস্তবিক বিশ্বাস করিতেন যে কেহ কেহ ব্রহ্মার মুখ হইতে, কেহ কেহ বা তাঁহার হাত হইতে এবং কেহ কেহ বা তাঁহার পা হইতে উৎপন্ন;