পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

তদনুসারে তাঁহারা আপনাদিগকে ভিন্ন ভিন্ন জাতিতে ভাগ করিয়া কাহারও উপর লেখাপড়ার, কাহারও উপর যুদ্ধ বিদ্যার, কাহারও উপর ব্যবসার এবং বাকিদের উপর সেবার ভার দেন; ইহাতে যে একটি ‘অচলায়তনের’ সৃষ্টি হইয়াছিল, তাহা এখনও বর্ত্তমান রহিয়াছে এবং যতদিন ঐরূপ ধর্ম্ম বিশ্বাস থাকিবে, ততদিন উহা বর্ত্তমান রহিবে।”

 ম্যাট্‌সিনি আশি বৎসর আগে যে কথাগুলি বলিয়া গিয়াছেন আজও তাহা সভ্যজগতের কাণে বাজিতেছে।

 ভারতের ভবিষ্যৎ এই প্রশ্নের সমাধানের উপর নির্ভর করিতেছে। এই বিষয়ে কিন্তু প্রাচীন ভারত যথেষ্ট উদার ও বিজ্ঞ ছিল। ছান্দোগ্য উপনিষদে সত্যকাম জাবালের সুন্দর উপাখ্যান হইতে আমরা জানিতে পারি যে তৎকালে সত্য-প্রিয়তা ও বিদ্যার বলে লোকে সমাজের সর্ব্বোচ্চ সম্মান এবং শীর্ষস্থান (ব্রাহ্মণত্ব) লাভ করিতে পারিতেন।

 কেহ কেহ বলেন আমাদের বেদান্তের মতে সমুদয় জগতই ব্রহ্মের অংশ—উচ্চ জাতি, নীচ জাতি এইরূপ জ্ঞান প্রকৃতপক্ষে অজ্ঞান হইতে উৎপন্ন। বেশ কথা, কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করি দেশের মধ্যে কয়জন এই উচ্চ দার্শনিক তর্ক হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে এবং সেই অনুসারে কাজ করিয়া থাকে? আমরা ত দেখি ব্রাহ্মণাদি উচ্চ জাতি নমঃশূদ্রাদিকে কুকুর শিয়ালের মত জ্ঞান করেন।

 অনেকে বলেন যে, অবনত জাতিরআ এতদিন ধরিয়া সমাজে তাহাদের হীন অবস্থার জন্য আদৌ দুঃখিত ছিল না, কেবল হালেই তাহাদের সম্মান জ্ঞান জাগিয়া উঠিয়াছে এবং তাহারা ইহার বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ করিয়াছে! আমাদের দেশের যুবকদের সম্বন্ধেও ‘এংলো ইণ্ডিয়ান্‌রা’ ঠিক এই কথাই বলিয়া থাকেন। ইউরোপীয়ান্‌দের আগমনের বহুপূর্ব্বে