পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

ব’লে প্রমাণ না ক’রে আর ছাড়্‌ছি না। আমরা বলি “আমরা হিন্দু—আধ্যাত্মিক জাতি, ঘোরতর spiritual; আর য়ুরোপীয়েরা জড়বাদী, বড় material;—তবু caste কোথায় নেই মশাই—এই জাত মেনে চলা? ইংলণ্ড ও আমেরিকার ধনী কি দীন দরিদ্র প্লিবিয়ানের মেয়ে বিয়ে করেন, না তার সঙ্গে একসঙ্গে আহারাদি করতে সম্মত হন? তা যখন চলে না তখন আর আমাদের সঙ্গে তফাৎ রইল কোথায়?” Things which are equal to the same thing equal to oné another যুক্তি এমনই চমৎকার! বংশগত জাত আর অবস্থাগত জাত যে এক নয় তা এইটুকু বল্‌লেই স্পষ্ট বোঝা যাবে যে—বিশেষ বংশে জন্মগ্রহণের উপর কারো হাত নেই, কিন্তু অবস্থার পরিবর্ত্তন মানুষ চেষ্টার দ্বারা কর্‌তে পারে। দরিদ্র ধনী ও গুণী হয়ে উঠ্‌লেই য়ুরোপ আমেরিকায় তারা কুলীন হয়ে পড়ে; দরিদ্র অবস্থা থেকে ধনী হয়ে সার্ বা লর্ড উপাধি অনেকেই পেয়েছেন এবং তাঁরা সমাজে অভিজাতদের সমকক্ষ হতে পেরেছেন। কিন্তু আমাদের দেশের নীচু জাত হাজার তপস্যা কর্‌লেও এখন আর পূর্ব্বকালের মত উচ্চজাত ব’লে গণ্য হতে পারে কি?

 যাহোক এসব কথা ছেড়ে সমস্যাটিকে একটু তলিয়ে দেখতে হবে; তুলনা ক’রে দেখ্‌তে হবে য়ুরোপের জাতিভেদ ও আমাদের দেশের জাতিভেদের মধ্যে বাস্তবিক কোন মূলগত পার্থক্য আছে কি না, এদেশের মত য়ুরোপে জাতিভেদ মানুষকে বংশের পর বংশ ধ’রে ক্রমাগত ঘৃণা ক’রে, পেষণ ক’রে, তাকে চেপে কোণঠাসা ক’রে চিরকালের জন্য হীন ক’রে রেখেছে কি না, তার আত্মসম্মান জ্ঞান প্রায় লুপ্ত ক’রে দিয়ে সর্ব্বপ্রকারে তাকে খর্ব্ব করেছে কি না, হৃদয়হীন ভাবে তার মনুষ্যত্বের অবমাননা করেছে কি না।