পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাতিভেদ ১৩৩ একটু সবিস্তারে আলোচনা করা ফাঁক। মনে রাখবেন আজকালকার এই “জাতিভেদ” কথাটা আমরা সৃষ্টি করেছি, এটা পুরাতন নয়, পুরাতন সংস্কৃত গ্রন্থে এর উল্লেখ মাত্র নেই। সে সকল পুস্তকে বর্ণভেদ বর্ণাশ্রম প্রভৃতির কথা দেখা যায়। গীতায় আছে—“চাতুর্ব্বণ্যম্ ময় স্থটম্ গুণকর্ম্মবিভাগশ: |” আমাদের দেশে বহুপূর্ব্বে আর্য্য s' অনার্য এই দুই শ্রেণীর লোক ছিল। ঋগ্বেদসংহিতা পড়লে তাদের আচার ব্যবহার সম্বন্ধে অনেক কথা জানা যায় ইন্দ্র বরুণ প্রভৃতি তখন আর্য্যদের দেবতা ছিলেন । আর্ঘ্যের { করতেন,-“হে ইন্দ্র, হে বরুণ, তোমাদের প্রচুর সোমরস প্রদান করেছি, পান ক’রে প্রসন্ন হও—এবং কৃষ্ণকায় অনার্য্য দস্থ্য বধ কর ।” অনার্য্যের কৃষ্ণকায় ও কদাচারী ছিল । আর্ঘ্যের ছিল সভ্য এবং গৌরবণ । ’ এদেশে তখন জ্বাতিভেদের মূলে ছিল বর্ণভেদ আর্ঘ্যের যখন পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে উত্তর-ভারতের নদীবহুল সমতলক্ষেত্রে ক্রমে বসতিবিস্তার করতে লাগল, তখন কৃষ্ণকায় আদিম অধিবাসীদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ বাধ ল এবং পরাজিত হয়ে তারা একে একে পর্ব্বতে জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করলে। ভাল, কোল, সাওতাল প্রভৃতি জাতির তাদের বংশধর। আমেরিকা দেশেও এইরূপ ঘটনা ঘটেছে। পরাক্রান্ত যুরোপীয় জাতির ংঘর্ষণে ও আওতায় রেড ইণ্ডিয়ান প্রভৃতি হীনজাতি টিকৃতে না পেরে, বনে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষা করবার চেষ্টা করেছে। যে দেশে বর্ণভেদ ছাড়া জাতিভেদের অন্য কোন ভিত্তি ছিল না, সে দেশে এই হাজার রকম” জন্মগত জাতির উৎপত্তি কিরূপে হ’ল ? নানা জাতিতে বিভক্ত বর্ত্তমান হিন্দু সমাজটিকে বিধাতা ঠিক এইরূপে তৈরী ক’রে শৃঙ্খল দিয়ে বেঁধে দু্যলোক থেকে ভূলোকে নামিয়ে দিয়েছেন, অথবা এই ভূলোকেই এইরূপ জাতিভেদের স্বাই হয়েছে ?