স্বচ্ছন্দ আদানপ্রদানে বিভিন্ন জাতি মিলে মিশে এক হয়ে গেল। বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণের আরও কতকগুলি স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। বাঙ্গালীর মুখাবয়ব ও শরীরগঠন দেখে তাকে কোনমতে খাঁটি আর্য্যসন্তান ব’লে মেনে নিতে পারা যায় না। মণিপুর, কোচবিহার, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজবংশ খাঁটি আর্য্যবংশ ব’লে পরিচিত হ’তে চান। শুধু তাই নয়, ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা দিয়ে কুলজী তৈয়ারী ক’রে আপন আপন বংশের ধারাকে টেনে টেনে কেউ সূর্য্য কেউ চন্দ্র কেউ বা শুক্র কেউ বা শিব পর্য্যন্ত নিয়ে যান। কিন্তু মুখের উপর যে ছাপটা স্পষ্ট হ’য়ে আছে—তাতে তাঁদের চেহারায় মঙ্গোলীয় সংমিশ্রণ বেমালুম ধরা প’ড়ে যায়। তারপর শক ও হিন্দু মিলে যে রাজপুত ও জাঠ প্রভৃতি ক্ষত্রিয় বংশের উদ্ভব হয়েছে এ কথা ইতিহাসসম্মত।
বাংলাদেশে ১১০০।১২০০ বৎসর ধ’রে বৌদ্ধাধিকার ছিল। বিক্রমপুরে ও তার নিকট স্থানে আবিষ্কৃত তাম্রশাসনে বৌদ্ধযুগের বাংলার যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। এই সুদীর্ঘকাল ধ’রে নানাজাতির যখন অবাধ সংমিশ্রণ হ’য়ে এসেছে, যখন জাত আর আছে কোথায়? খাঁটি আর্য্যরক্ত অনেক অনুসন্ধান কর্লেও মিল্বে না। এ সম্বন্ধে কতকগুলি কথা “সমাজসংস্কার সমস্যায়” বলেছি, এখানে তার পুনরুল্লেখ নিস্প্রয়োজন (“সমাজসংস্কার সমস্যা” ১০২—৬ পৃঃ)। বৌদ্ধপ্লাবনে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুধর্ম্ম এমন আশ্চর্য্যভাবে নিঃশেষ ও লোপপ্রাপ্ত হয়েছিল যে আদিশূরের সময় বেদবিধি অনুসারে যজ্ঞ সম্পন্ন কর্বার উপযুক্ত ব্রাহ্মণ চেষ্টা ক’রেও একজনও পাওয়া যায়নি। তাই রাজা কান্যকুব্জ থেকে মাত্র পাঁচজন সুব্রাহ্মণ নিয়ে এসে বাংলায় বসবাস করিয়েছিলেন। এঁরা পাঁচজনে বঙ্গদেশী কন্যার পাণিগ্রহণ করেছিলেন। সুতরাং বাংলার নব্যব্রাহ্মণের খাঁটিত্ব কোথায়? আর এক আশ্চর্য্য কথা এই