পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতিভেদ
১৩৯

অধিকারী হ’তে হবে? সেক্ষপীয়রের বা মিল্টনের বংশে তাঁদের মত প্রতিভাশালী ব্যক্তি আর জন্মগ্রহণ করেছেন কি? পৃথিবীতে বরং ঠিক এর উল্টাই দেখা যায়। প্রকৃতির কেমন আশ্চর্য্য খেয়াল যে প্রতিভাশালী ব্যক্তির বংশে সেরূপ গুণান্বিত পুরুষ আর প্রায় জন্মায় না। আর প্রতিভার কথা ছেড়ে দিলেও যিনি প্রকৃত প্রস্তাবে গুণী কুলীন, তাঁর সন্তান যে মাতৃগর্ভ থেকে নয়টি গুণ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হবে এমন সম্ভাবনা একটুও নেই। কুলীনের ছেলে নামে “কুলীন” হ’তে পারে, কিন্তু মনে রাখ্‌তে হবে কাঁটাগাছ উর্ব্বরক্ষেত্রেও জন্মায়! সুতরাং অপরকে হীন ও অবনত ক’রে রেখে আর এরকম একটা অন্যায় গণ্ডী টেনে আপনার জাত বাঁচিয়ে চল্‌বার মূলে কি যে সৎ উদ্দেশ্য বর্ত্তমান আছে তা দেবতা হয়ত বুঝ্‌লেও বুঝ্‌তে পারেন, কিন্তু মানুষের বুদ্ধির তা অগম্য! আবার শুনুন আশ্চর্য ব্যাপার! ঘটকপ্রবর দেবীবর বামুনদের মধ্যে মেল বাঁধ্‌লেন—বংশের দোষ দেখে দেখে একরকম দোষীদের একত্র ক’রে ক’রে; ফলে একই জাতি থেকে আবার বহু প্র-পরা-উপজাতির সৃষ্টি হ’ল। সমাজবিধি হ’ল এই যে মেলে মেলে বিবাহ দিতে হবে, মেলান্তরে বিবাহকার্য্য সম্পন্ন কর্‌লে একবারে কৌলিন্য-বিচ্যুতি,—অর্থাৎ মেলগত দোষকে বংশে কায়েমি করে না তুলে সমাজে হীন হ’তে হবে। “অঘরে” মেয়ে দিলে কুল যাবে। সুতরাং কন্যাকে “সঘরে” অর্থাৎ নিজের গণ্ডীবদ্ধ মেলের ভিতর পাত্রস্থ করাটাই কুলীন পিতার বাঞ্ছিত হ’য়ে দাঁড়াল। কিন্তু ফল হ’ল বড় বিষময়। পাত্রের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় “কুলীনের কুলরক্ষা করাই কুলীনের ধর্ম্ম” হ'য়ে উঠ্‌ল। আর ব্রাহ্মণের ছেলে কদাপি ধর্ম্মপালনে পরাঙ্মুখ নন! তাই পূর্ণ উদ্যমে কেউ ৬০, কেউ ৭০, কেউবা ৮০টি পর্য্যন্ত বিবাহ ক’রে বস্‌লেন এবং পাকা খাতায় বিবাহের ‘লিষ্টি’