দেখ্লেই শত্রুর গুলিতে বিদ্ধ হ’তে হবে। সুতরাং শাণ্ডিল্য, বাৎসায়ন বা ভরদ্বাজ—এঁদের মধ্যে কার বংশধর ট্রেঞ্চে খাবার জুগিয়ে দিয়ে গেল তার আবিষ্কার কর্বার চেষ্টা কর্লে সে খাবার কখনও মুখে তুল্তে হবে না। আজ এই বিজ্ঞানপ্লাবনের যুগে সকল দেশে সকল সমাজের অবস্থা এরূপ পরিবর্ত্তিত হয়েছে যে পৃথিবীতে বেঁচে থাক্তে হ’লে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য স্থাপন ক’রে ব্যবস্থার পরিবর্ত্তনও আমাদের পক্ষে অনিবার্য্য হয়ে পড়েছে। এই সামঞ্জস্যস্থাপনের চেষ্টায় যে যে পুরাতন প্রতিষ্ঠানগুলিকে বাদ দিতে হবে তার মধ্যে জাতিভেদের কঠোর নির্ম্মমতা প্রথম এবং প্রধান!
জাতিভেদের বজ্রকঠোর বন্ধন বাংলা দেশে তবু ত অনেকটা শিথিল হয়েছে। বাংলায় ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্যের পরই নবশাখজাতি সমাজে স্থান পেয়েছেন এবং তাঁদের জল “চল” হয়েছে। সামাজিক অবস্থার পরিবর্ত্তনে, ও শিক্ষাদীক্ষার গুণে অন্য অন্য অনেক জাতি বাংলাদেশে ক্রমে ক্রমে মুখ তুলে দাঁড়াচ্ছেন এবং এক “অচলায়তনে”র নিতান্ত গোঁড়া বামুন ছাড়া আর কেউই তাঁদের ঘৃণা ক’রে দূরে ঠেলে দিচ্ছে না। কিন্তু মান্দ্রাজে জাতিভেদের শাসন এখনও বড় ভয়ানক। সেখানে আয়ার ও আয়েঙ্গারগণ ব্রাহ্মণ; ব্রাহ্মণেতর সকল জাতিই নীচ ও অস্পৃশ্য। নবশাখ প্রভৃতি যেসব জাতি বাঙালী হিন্দুসমাজে একটা মাঝামাঝি স্থান অধিকার ক’রে আছেন মান্দ্রাজী হিন্দুসমাজে সেরূপ কিছু নেই। মান্দ্রাজে পেরিয়া নামে এক সম্প্রদায় আছে, তাদের অবস্থা বড়ই হীন। তারা বংশের পর বংশ ধরে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্য্যন্ত মাথা হেঁট ক’রেই থাকে, তাদের ছায়া স্পর্শ করলে ব্রাহ্মণকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, এতই তারা অভিশপ্ত ও অপবিত্র! স্বর্গগত শিবনাথ শাস্ত্রী মহাশয় তামিল দেশ ভ্রমণকালে এক সম্প্রদায় লোক দেখেছিলেন; তারা দূর থেকে চীৎকার কর্তে কর্তে আসে—“মহাশয় স’রে যান আমি অধম যাচ্ছি।”