পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

আন্দোলন করে—এদের কে চেনে? কায়স্থ ব্রাহ্মণ প্রভৃতির সংখ্যা ২৩ লক্ষ। আর তথাকথিত নিম্নশ্রেণী কত? একা নমঃশূদ্র ২৫ লক্ষ; ব্রাত্যক্ষত্রিয় ৫ ১/২ লক্ষ। বাঙ্গালার অধিবাসী ৪ ১/২ কোটী। এই ৪ ১/২ কোটীর মধ্যে কায়স্থ ব্রাহ্মণ শতকরা ৬ ১/২ কি ৭ জন। কিন্তু আমরা অপর সবাইকে বাদ দিয়ে ঘরকন্না কর্‌তে চাই। এ একটা আত্মঘাতী ব্যাপার। সমাজের যাঁরা বলিষ্ঠ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, যাঁরা শিক্ষা পেলে সমাজের নেতা মুখপাত্র হবেন, তাঁদের না টেনে তুলে তাঁদের বাদ দিয়ে ঘর কর্‌তে চাই এ ত বাতুলতা; এ ত মহাপাপ। কোন কারণে হয়ত আমাদের অবস্থা ভাল, আমাদের গোলায় ধান আছে। দেশে যদি দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হয় তাহলে কি আমরা ঘরের দরজা বন্ধ ক’রে বিলাসিতা কর্‌ব, আর আমাদের প্রতিবাসীরা মারা যাবে? আমাদের কর্ত্তব্য, যারা পশ্চাৎপদ তাদের সকলকে টেনে তুলি। আমরা দেশকে মা বলি। যাঁরা লম্বা লম্বা বক্তৃতা করেন আমি তাঁদের জিজ্ঞাসা করি তাঁরা যদি বাঙ্গালাকে মা বলেন তবে কি সকলকে ভাই বলে আলিঙ্গন কর্‌বেন না—মায়ের সন্তানকে পদাঘাত ক’রে দূরে ঠেলে কি তাঁরা অগ্রসর হবেন?—তবে তাঁদের কিসের মা বলা?

 ব্যাপার কি—একটা বিড়াল ঘরে ঢুক্‌লে—হয়ত আস্তাকুড় ঘেঁটে, মরা ইঁদুর চট্‌কে—দুধ খেলে; আমরা কি তা ফেলে দিই? কিন্তু যদি একজন তথাকথিত ব্রাত্যক্ষত্রিয় বা নমঃশূদ্র ঘরের চৌকাটের উপর আসে, আমরা জল ফেলে দিই। বরফ্ লেমনেড্ খাও না? তা কে তৈরী করে? সম্প্রতি আমার স্বগ্রামের নিকট এক শ্রাদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। কলিকাতা থেকে বরফ এসেছে—ভট্টাচার্য্য ব্রাহ্মণের অভ্যর্থনার জন্য। যেই বরফ, সেই ত জল—H2O—অর্থাৎ অম্লজান ও উদজানের যৌগিক। জল খাবে না, বরফ খাবে। কারণ,—ভণ্ডামি, প্রতারণা, ইচ্ছাকৃত