পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাতিত্য সমস্যা
১৫৫

এই তিন সেনে মিলে জাতের সর্ব্বনাশ করেছে। যদি পাকস্থলী কেটে বের ক’রে রাসায়নিক বিশ্লেষণ (chemical analysis) করেন, তবে বুঝা যাবে কার কতটুকু জাতি আছে। তবে কেন আমরা জাত্ জাত্ ক’রে মারা যাই?

 আমি এখন যোগী, মাহিষ্য, ব্রাত্যক্ষত্রিয় প্রভৃতি সমাজের মুখপত্রগুলি যতদূর সম্ভব পড়্‌বার চেষ্টা করি। যেখানে দেখি—সেইখানে আর্ত্তনাদ। তাঁরা প্রকাশ্যে বলেন না কে তাঁদের প্রপীড়িত কর্‌ছেন, কিন্তু তাঁরা ভাবেন তাঁরা অত্যাচারিত। সেদিন যোগীসখায় লেখা দেখলাম— “আমরাও কালের কুটিলাবর্ত্তে পড়িয়া অধঃপতিত ও লাঞ্ছিত হইয়া আছি।” সকল পত্রিকাতেই এক কথা। কে কর্‌ছে—তাঁরা কারো নাম করেন না। এ বড় দুঃখের কথা। তাঁরা নিজেরা নিজেদের হীন অধঃপতিত মনেই বা করেন কেন, আর সত্যই কেউ অত্যাচার কর্‌ছে বুঝে তা সহ্যই বা করেন কৈন? কাল এক জায়গায় পেলাম—লেখক লিখছেন—“তথাকথিত উচ্চজাতির অবস্থা দেখি—তাঁহাদের নিকট যোগী প্রভৃতি জাতি অনাচরণীয়। কিন্তু পশ্চিমা-কুর্ম্মী পরিচয় দিলেই তার জল আচরণীয়।” আমরা কি পশ্চিম দেশে C. I, D. পাঠিয়ে তার জাতের খবর নিই! আবার কলিকাতায় ঝি নামক এক জাতীয় জীবের জলও চলে। যাঁরা ছুৎমার্গ অবলম্বন ক’রে চলেন তাঁরা কলিকাতায় গিয়ে অনেক সময়ে মেসে উঠেন। তাঁরা কি অনুসন্ধান করে দেখেন পাচক ব্রাহ্মণ প্রকৃত পক্ষে কি জাতি? প্রিন্সিপ্যাল গিরিশচন্দ্র বসু একদিন তাঁর ঝির সঙ্গে আলাপ কর্‌ছিলেন। ঝি বল্‌লে, “বাবু, লোক দেখলেই ধর্ম্ম গেল—না দেখলে আর কিছু নয়। ছোয়াছুঁয়িটা কেবল লোক দেখাদেখি।” এই ঝি হিন্দুসমাজের প্রচলিত ধর্ম্মের সার বুঝেছে।