তারপর সুপ্রচলিত ‘নেশন’ শব্দটির (আমাদের দেশের অবস্থা বিবেচনা ক’রে) বিচার করা যাক্। বাঙ্লা হিন্দু-মুসলমানের দেশ— উভয়ের মাতৃভাষা এক—বাঙ্লার হাওয়ায়, সুজন্মা-অজন্মায়, সুখে দুঃখে, আমরা অনেকটা এক বটে। কিন্তু ধর্ম্মে আমরা পরস্পর থেকে পৃথক। হিন্দুর মধ্যে আবার নানা-প্রকার উপজাতি সব আছেন। এখন একটা ক্ষণিক আবেগের বশে আমরা হিন্দুমুসলমান এক হয়েছি বটে, কিন্তু এই একত্ব কি দৃঢ়ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়েছে? একদিনেই বনিয়াদ পাকা হ’য়ে যাবে এমন আশা অবশ্য আমি করি না। তবু আপনাদের এই মিলনকে সত্যবস্তু ক’রে তোল্বার জন্যে আমরা বাস্তবিক কি কোন সত্য চেষ্টা কর্ছি? দিল্লীর জুম্মা মস্জিদে হিন্দু সন্ন্যাসী আপন মর্ম্মকথা ব্যক্ত করেছেন। হিন্দু মুসলমান তা শুনেছে—মহামতি তিলকের শবদেহ হিন্দু মুসলমান মিলে বহন করেছে। সকলে সে অপূর্ব্ব দৃশ্য দেখেছে। এ-সকলই আশার কথা। কিন্তু এ সম্মিলন স্থায়ী হবে কি? এখনই ভেদনীতির কার্য্য আরম্ভ হয়েছে। আলিগড়ে মুসলমান বিশ্ববিদ্যালয়, বারাণসীতে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আবার লক্ষ্নৌ সহরে শিয়া মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়। কেন এই স্বাতন্ত্র্য? সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতি মানুষের অবশ্যশিক্ষণীয় বিষয়ে এমন কি বস্তু আছে যা হিন্দু মুসলমান আপন আপন ভাইএর মত পাশাপাশি ব’সে শিখতে পারে না?, হিন্দু মন্দিরে পূজা করেন, মুসলমান মস্জিদে উপাসনা করেন। কিন্তু শিক্ষামন্দিরে যদি আমরা হিন্দুমুসলমান এক আসনে বস্তে না পারি, তবে কি ক’রে বলি যে আমরা ভাই ভাই হয়ে মিল্তে চেষ্টা কর্ছি। আমরা যে ইচ্ছা ক’রে বুদ্ধির দোষে পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছি। কোথায় সার্ব্বভৌমিকতা ও উদারতার প্রতিষ্ঠা
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৯৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্ততাবলী