পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মিথ্যার সহিত আপোষ ও শান্তি ক্রয়
১৭৯

কাল কলিকাতার অলিতে গলিতে উইলসন হোটেলের ক্ষুদ্রকায় ও সাধারণ সংস্করণ। বাপ মা কত কষ্ট করে ছেলেকে টাকা পাঠায় তাদের শিক্ষার জন্য-আর তাহারা ইহার অধিকাংশ খরচ করে চপ কট্‌লেটে ও বায়স্কোপে। আমি অবাক হ’য়ে দেখি, বিকাল ও সন্ধ্যাবেলা, যখন আমাদের দেশে ছেলে বুড়ো সাধারণতঃ ভোজন করে না-তখন আমাদের শিক্ষিত যুবকগণ কাঁটা চামচের শব্দে রাস্তায় লোককে চমকিত করিয়া তুলেন। ঘরের জীবন ও বাইরের জীবনের এই বিরাট পার্থক্য আমি গত ৫০ বৎসর যাবৎ কলিকতাতেই লক্ষ্য করিতেছি। বাবুরা বাইরের বাড়ীতে, সহিস ও কোচ্‌ম্যানের মারফত মুরগী পোষেন ও তাহার কোর্ম্মা ভক্ষণ করেন—অন্তঃপুরে প্রবেশ করিবার সময় গৃহিণী একটু গঙ্গাজল ছিটাইয়া শুদ্ধ করিয়া তাঁহাদের গ্রহণ করেন। মুখ ফুটিয়া কিছু বলিবার যো নাই। বাঙালী জীবনে ভয় ও সাহসের অপূর্ব্ব সমাবেশ এইখানে। এই রকম দোটানা জীবনের মধ্যে থাকার দরুণ, গত ১০০ বৎসরের মধ্যে আমরা বিশেষ কিছু অগ্রসর হইতে পারিয়াছি বলিয়া বোধ হয় না। ব্যক্তিগতভাবেই হউক আর সমাজগতভাবেই হউক আমরা বিশেষ কোন উন্নতি লাভ করিতে পারি নাই। না পারার কারণ কি তাহাই আলোচনা করিব।

 আমাদের জাতীয় উন্নতির প্রধান অন্তরায় স্ত্রীশিক্ষার শৈথিল্য ও উদাসীনতা। নারী জাতিকে যদি শিক্ষার পথে এগিয়ে দিতে পারিতাম তবে জাতির বর্ত্তমান অবস্থা এত শোচনীয় হইত না। আমাদের দেশে যখন ইংরাজী রাজভাষা হইল-তখন ইংরাজী-ওয়ালাদের আদর খুব বেশী-বড় চাকুরী ইংরাজী-ওয়ালাদের একচেটিয়া হইল। চাকুরীর লোভে তখন লোকে ইংরাজী শিখিত। এখন সে দিন নাই। তবুও অনেকে বলেন মেয়েদের লেখা পড়া শিখে কি হ’বে—তারা ত আর,