আমরা কোন কালে শোধ দিতে পারিনা। তাহারা চেষ্টা করিলে ছেলেদের মন ভালরই দিকে ও অবহেলা করিয়া বা ভ্রমবশতঃ তাহাদিগকে মন্দের দিকে চালিত করিতে পারেন। এরূপ ভাবে দেখিলে বুঝা যায় পিতামাতার ন্যায় শিক্ষকের প্রভাব আমাদের উপর বড় সামান্য নয়।
এইরূপ গুরুভার যাঁহাদের উপর ন্যস্ত, দুঃখের বিষয় আমরা তাঁহাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখি না। যাঁহারা ছেলেদের শিক্ষা দিবেন, তাঁহারা সে কার্য্যের যথার্থ উপযোগী কিনা, শিক্ষা দিবার তাঁহাদের যথেষ্ট সামর্থ্য আছে কিনা, তাহা আমরা ভাবিয়া দেখিনা।
আমাদের স্কুলে শিক্ষকের বেতন খুব সামান্য। অনেক কাব্যতীর্থ কিংবা আই, এ, উপাধিধারী শিক্ষকের মাহিনা আমাদের দেশের সামান্য শ্রমজীবির মাসিক উপার্জ্জনের অপেক্ষা অনেক সময় কম। আজকাল বিদ্যা অপেক্ষা অর্থের আদর অনেক বেশী। জনসমাজে খাতিরও আজকাল অর্থের পরিমাণের দ্বারা হয়। শুধু অর্থোপার্জ্জনের পথ সুগম করিব এই আশায় আজকাল আমাদের বিদ্যাশিক্ষা; সে হিসাবে শিক্ষকের স্থান অনেক নীচে পড়ে। কলিকাতায় বড় লোকের বাড়ীতে বাজার সরকার, মোসাহেব প্রভৃতি আসবাবের সহিত স্কুলমাষ্টার স্থান পাইয়া থাকেন। তাঁহারা যে কিরূপ মহৎ কার্য্যে আত্মসমর্পণ করিয়াছেন, তাহা আমরা ভাবিয়া দেখি না।
তাহার ফলে এই দাঁড়াইয়াছে যে যাঁহারা জীবনে আর কোন রকম জীবিকা অবলম্বন করিতে পারেন নাই, তাঁহারাই প্রায় স্কুলমাষ্টার হন। তাঁহাদের হয় হোমিওপ্যাথিক বাক্স লইয়া ডাক্তারি করিতে হইবে, না হয় স্কুলে মাষ্টারী করিতে হইবে।