পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

মাষ্টারীর মাহিনা এত অধিক নয় যে, সেটী একটী আকর্ষণ স্বরূপ হইবে। সকলেরই দৃষ্টি কোম্পানীর নোক্‌রী, মুন্সেফী, ডেপুটীগিরি ইত্যাদির প্রতি, সে সব না হইলে তখন অগতির গতি মোক্তারি ও ওকালতি। অনেক সময় দেখা যায়, যাঁহারা এই কার্য্যে ব্যাপৃত আছেন, তাঁহারা নিজেদের কার্য্যের গুরুত্ব বুঝেন না। তা ছাড়া জীবন সংগ্রাম তাঁহাদের কাছে অনেক সময় অতি ভীষণ আকার ধারণ করে। বেতন এত অল্প, যে, অনেক সময় বাধ্য হইয়া অবসর সময়েও উপার্জ্জনের অন্য পন্থা দেখিতে হয়। অনেকে সকাল বিকাল ও রাত্রে টিউশনি করেন। এই অক্লান্ত পরিশ্রমের পর স্কুলের কয় ঘণ্টা অনেক সময় তাঁহাদের বিশ্রাম স্বরূপ হইয়া থাকে। প্রকৃত শিক্ষাদানের জন্য যেরূপ মানসিক অবস্থা থাকা উচিত সেরূপ ধৈর্য্য ও সংযম প্রায়ই থাকেনা। ছাত্রদিগের শিক্ষার উন্নতির বিষয় ভাবিবার জন্য অবসর পর্য্যন্ত পান না। এই দায়িত্বপূর্ণ কার্য্যের প্রতি তাঁহাদের যে শ্রদ্ধা ও অনুরাগ থাকা উচিত, তাহার কিছুই থাকে না। রুটীন (Routine) অনুযায়ী “দিনগত পাপক্ষয়” করিলেই তাঁহাদের দায়িত্বের অবসান হইয়া থাকে।

 এই প্রণালীতে কার্য্য চলাতে, যে সকল কুফল হইতেছে তাহা আমাদের কাহারও অজ্ঞাত নাই। যথার্থ জ্ঞানের উপর আমাদের ভক্তি শ্রদ্ধা চলিয়া যাইতেছে। পড়াশুনা কেবল এখন পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য। প্রকৃত বিদ্যার আদর নাই। আমরা কেহই এ শিক্ষাপ্রণালীর উপর সন্তুষ্ট নই। এমন কি শিক্ষাবিভাগের ডিরেক্টর মহোদয় স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন যে আমাদের স্কুলের অবস্থা শোচনীয়। স্কুলগৃহে ছাত্র সংখ্যা বেশী হওয়ায় স্থানাভাব। অল্প বেতনে শিক্ষক মহাশয়েরা কেহই সন্তুষ্ট নহেন।