প্রবাদ আছে, যে, “লেখাপড়া করে যে, গাড়ী ঘোড়া চড়ে সে;” এই অর্থকরী বিদ্যার মোহিনী মায়ায় আবদ্ধ হইয়া অনেকে পুত্ত্রদিগকে উচ্চশিক্ষা দিতে লালায়িত হন। সুতরাং উচ্চশিক্ষার যে যে অংশটুকু অর্থ উপার্জ্জনের সহায়তা করে কেবলমাত্র সেইটীর উপরেই লোকের দৃষ্টি থাকে। রাজকীয় উচ্চপদই বল, আর ডাক্তারী ওকালতিই বল, অর্থোপার্জ্জনের প্রচলিত পথে চলিতে হইলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপযুক্ত ডিগ্রীরূপ টিকিট চাই। যাঁহার গাত্রে ঐ নির্দ্দিষ্ট ছাপ আছে তিনি অনায়াসে ঐ পথে অগ্রসর হইতে পারেন। যাঁহার নাই তিনি বিতাড়িত হইবেন। এই জন্যই ডিগ্রীর এত আদর। এই ডিগ্রীর প্রতি অত্যধিক আসক্তিই আজকাল যত অনর্থের মূল হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এইজন্য পাঠ্যপুস্তকের স্থলে নোটবুক বা অর্থ পুস্তকের এত আদর। শিক্ষকের নিকট Notes বা টীকা আদায় করিবার জন্য যত তাগাদা, আর পাঠ্যপুস্তক ছাড়িয়া দিয়া পুরাতন বৎসরের প্রশ্নপত্রের যথাযথ উত্তর মুখস্থ করিতে তত ব্যস্ততা দেখা যায়। প্রশ্নপত্র চুরিও এই অত্যধিক ডিগ্রীব্যাধির কুফল। এই শিক্ষার ফলে লোকে সর্ব্বশাস্ত্র পাঠ করিয়াও মূর্খ হইয়া থাকে। যতদিন অর্থের উদ্দেশ্য বিদ্যাশিক্ষা এই ভুল ধারণা আমাদের মন হইতে সম্যক্রূপে অপসারিত না হইবে, ততদিন প্রকৃত শিক্ষা জনসাধারণের নিকট পৌঁছিবে না। নৈতিক ও মানসিক উন্নতি সাধনই যে শিক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য একথা ভুলিলে চলিবে না। অর্থ উপার্জ্জনের ত বিবিধ পন্থা আছেই এবং উচ্চশিক্ষা লাভ করিলে যে অর্থ উপার্জ্জনের সহায়তা হয় সে বিষয়ে সন্দেহ নাই, কিন্তু তাই বলিয়া উচ্চ শিক্ষাকেই অর্থোপার্জ্জনের একমাত্র উপায় স্থির করিলে চলিবে না। এ ভ্রম দূর করিতে হইবেই। না করিলে নিস্তার নাই। শত শত বালক
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২৮২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষাবিষয়ক কয়েকটী কথা
২৫১