পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫২
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

পরীক্ষায় অকৃতকার্য্য হইলে বলে—“My career is ruined” আমার জীবনের গতি রুদ্ধ হইয়া গেল, যেন পাশ হইলে তাহারা স্বর্গের চাঁদ হাতে পায়। এখানে Career অর্থে অর্থ উপার্জ্জনের সহজ উপায় বুঝাইতেছে। যদি অর্থ উপার্জ্জনই লক্ষ্য হয় তাহা হইলে এত অর্থ ব্যয় করিয়া অনর্থক শরীর পাত করিবার কি আবশ্যক? কই স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, জে সি ব্যানার্জ্জি এবং হাজার হাজার মাড়োয়ারী তাঁরা ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ পান নাই।

 বাস্তবিক কথা বলিতে কি, আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আর তেমন অর্থকরী নহে। অর্থোপার্জ্জনের জন্য শিক্ষিত বাঙ্গালী যুবকের পক্ষে ব্যবসা বাণিজ্য অবলম্বন ভিন্ন গত্যন্তর নাই। দূরদেশ হইতে মূর্খ মাড়োয়ারী ও গুজরাটীগণ আসিয়া আমাদের টাকা লুটিয়া লইয়া যাইতেছে, আর আমরা দেখিয়াও দেখিতেছি না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি শিক্ষিত বাঙ্গালী ব্যবসায়ে মন দেন তাহা হইলে এই টাকাটা ভদ্র লোকগণের বর্ত্তমান ভীষণ অন্নকষ্ট কিয়ৎ পরিমাণে দূর করিতে পারে।

 অর্থের কথা ছাড়িয়া দিয়া যদি প্রকৃত শিক্ষার জন্যই বিদ্যালয়ে বালকদিগকে প্রেরণ করা হয় তাহা হইলেও আর এক বিপদ উপস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুসারে সকল বালককেই স্ব স্ব স্বাতন্ত্র্য ভুলিয়া একই পথে চলিতে হইবে এবং একই পথ দিয়া বাহির হইতে হইবে। নির্দ্দিষ্ট পথের একটু এদিক ওদিক্ হইলেই হয় শিক্ষকের তাড়না, না হয় পরীক্ষায় অকৃতকার্য্যতা সতর্ক করিয়া দিবে। এই প্রণালীতে শিক্ষা দিলে বালকের প্রতিভা স্ফুরিত হইবার অবকাশ পায় না। যাহার মনের গতি যে দিকে, যদি বলপূর্ব্বক সেই গতি রোধ করিয়া তাহাকে অন্যদিকে চালিত করিবার চেষ্টা করা যায় তাহা হইলে সে গতি যে