পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অধ্যয়ন ও জ্ঞানলাভ
২৭৫

মেসের ত কথাই নেই। আমাদের দেশে কথা আছে—‘একে উস্‌খুস্‌ দুয়ে পাঠ, তিনে গণ্ডগোল চারে হাট।’ মেসে অনেকে একত্র জোটে— কাজেই প্রত্যেকে হাটের মধ্যে গিয়ে পড়ে। হাটে হয় হট্টগোল, সরস্বতী সেখানে টিক্‌তে পারেন না; মন্দিরে যেরূপ ভক্তের জপতপ আরাধনা—পাঠাগারে সেইরূপ ছাত্রের অধ্যয়ন ও সাধনা। ছাত্রের প্রধান কর্ত্তব্য অধ্যয়ন; আর এই অধ্যয়ন তপস্যা ব্যতীত আর কিছু নয়। একাগ্রচিত্ততা এই তপস্যায় সিদ্ধি দান করে।

 প্রথমে কথা এই যে—কি ক’রে পড়্‌তে হয়? ক ঘণ্টা পড় তার হিসাব রাখ্‌বার দরকার নেই, কিরূপ একাগ্রতার সহিত অধ্যয়ন কর সেইটাই সবার চেয়ে দর্‌কারী জিনিস। পড়াশুনার উদ্দেশ্য সফল কর্‌তে হ’লে—ঘণ্টার উপর নয়—একাগ্রতার উপর নির্ভর কর্‌তে হয়। আমি আজ সকালে ‘খুব’ পড়েছি—কিন্তু মোটে একঘণ্টা কি তার কিছু বেশী। এই ভাবে আমি রোজই পড়ি, তা রবিবার নেই, ছুটীও নেই, অবকাশও নেই। এই ভাবে সমানে (নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সহিত) পড়ে যেতে হবে। কিন্তু এদেশে ছাত্রদের প্রধান বিপদ গল্প, খেলা আর আড্ডা। একাগ্রতার ত সম্পূর্ণই অভাব; তার উপর খেয়াল ও হুজুগে, পড়্‌বার সব সময়টা কেটে যায়। পরে যখন পরীক্ষা কাছে এগিয়ে আসে তখন আহার, নিদ্রা ত্যাগ ক’রে, রাত্রি জাগরণে স্বাস্থ্য নষ্ট ক’রে তার জন্যে প্রস্তুত হবার বিপুল প্রয়াস। এ-কে লেখা পড়া বলে না, এ লেখা পড়া নয়, এ ইউনিভারসিটিকে ফাঁকি। কেবল মুখস্থ আর উদরস্থ; পেটুকের মিষ্টান্ন ভক্ষণের মত একমণ সন্দেশ টপাটপ্ করে গেলা, তারপর গলায় আঙুল দিয়ে বমি। সব সময়টা ফাঁকি দিয়ে পরীক্ষা কাছে এলেই টপাটপ্ মুখস্থ ও উদরস্থ করবার প্রয়াস; তারপর পরীক্ষামন্দিরে গিয়ে একেবারে