পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা
২৯৭

যেমন সৈন্যগণ সেতুবন্ধন করিয়া নদী পার হয় এবং সম্মুখে শত্রু কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়া পশ্চাদ্ধাবিত হইবার সম্ভাবনা দূর করিবার জন্ম নিজেরাই সেই সেতু নষ্ট করিয়া দেয়—সেইরূপ জাতীয়ভাবে শিক্ষা লাভ করিলে শিক্ষার্থী দিগের অনন্যোপায় হইয়া চাকুরী অবলম্বন করিবার আশা থাকে না। জাতীয় শিক্ষার আর একটা উপকারিতা আছে। অতি অল্পদিনের মধ্যে ভারতকে জগৎসভায় স্থান পাইতে হইলে তাহার সন্তানগণকে জাতীয়ভাবে শিক্ষিত হইতে হইবে। জাপান নিজের জাতীয়তা রক্ষা করিয়া পাশ্চাত্য শিক্ষা লাভ করিয়াছিল বলিয়াই গত ৫০ বৎসরের মধ্যে তাহার এই অভূতপূর্ব্ব উন্নতি। জাতীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করিলে একই সময়ের মধ্যে ১০ গুণ অধিক শিক্ষালাভ করা যায়। কারণ, এখানে মাতৃভাষায় সমুদায় বিষয় শিক্ষালাভ করিয়া শিক্ষার্থিগণ পাশ্চাত্য ভাষার শব্দ গাম্ভীর্য্য, ব্যাকরণ বিভীষিকার হাত হইতে নিষ্কৃতি পায়। পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী বলিয়াছেন, মহামতি জষ্টিশ রানাডে একদিন প্রশ্ন উত্থাপন করেন—ইংরাজ শাসনে আমাদের কি কি অপকার সাধিত হইয়াছে? তিনি উত্তরে বলেন আমাদের দেশে সমস্ত ধন শোষিত হইয়া বিদেশে যাইতেছে এবং শাসনে আমাদের কোনও হাত নাই। কিন্তু রানাডে মহাশয় মস্তক সঞ্চালন করিয়া বলিলেন “সর্ব্বাপেক্ষা অনিষ্ট এই যে আমরা সঙ্কীর্ণতার গণ্ডীর মধ্যে পড়িয়াছি। আমাদের wider outlook কমিয়া যাইতেছে। দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তা কমিয়া গিয়া আমরা খুঁটিনাটি লইয়া আছি এবং তাহাতে আমাদের সর্ব্বনাশ হইতেছে। যদি আমাদের স্বরাজ থাকিত তাহা হইলে আর এমনটি হইত না।” জাতীয় বিদ্যালয়ে পড়িলে এই কৌপীনধারী মহাত্মা এবং যাঁহারা দধীচির মত সর্ব্বস্ব দিয়া দেশের সেবা করিয়াছেন, তাঁহারাই ছাত্রদিগের আদর্শ হন। সেই