পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৪

বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার \ව কোন জাতির গৌরব ও মহত্ত্ব নিরূপণ করিতে হইলে, কি কি উপাদানে এই মহত্ত্ব গঠিত সর্ব্বাগ্রে তাহারই পর্য্যালোচনা করিতে হইবে । আমার বোধ হয়, ভূদেব ও বঙ্কিমচন্দ্রের লিখিত অভিমতের উপর নির্ভর করিয়া যাহারা বাদালীর, এমন কি, হিন্দু জাতির গৌরবের প্লাব করিয়া থাকেন, তাহারা অজ্ঞাতসারে ভ্রান্ত অভিমত পোষণ করেন মাত্র। রঘুনন্দন ও কুল্লুকভট্টের টক টিপ্পনী শ্লাঘার বিষয় জ্ঞান করিয়া যদি উহারই আদেশ সুভ্রান্ত সত্য মানিয়া, সেই অতীতপ্রায় কূট শিক্ষায় মনোনিবেশ আমাদের গৌরবের বিষয় বলিয়া অনুমিত হয়, আর বর্তমানের নূতন আশা, নূতন উদ্দীপনা ঠেলিয়া ফেলিয়া প্রাচীনের প্রচলন স্থির ধীর কর্ম্ম বলিয়া আদৃত হয়, জানি না এ মৃতপ্রায় জাতি নূতনের প্রবল অসহনীয় সংঘর্ষে আর কত দিন বাঁচিতে সক্ষম হইবে ! স্বাধীন চিন্তা জাতীয় জীবননদের উৎস । এই উৎস যে দিন হইতে শুকাইতে আরম্ভ করিয়াছে, সেই দিন হইতে মৌলিকতা ঃ অমুসন্ধিৎসা তিরোহিত হইয়াছে, সেই দিন হইতে বাঙ্গালী জাতির অধোগতির স্বত্রপাত হইয়াছে। আজ সহস্ৰ বৎসরকাল এই স্বাধীন চিস্তার স্রোত আলস্ত এবং অন্ধবিশ্বাসরূপ গভীর কৰ্দমে আবদ্ধ হইয়া জাতীয় জীবনের প্রস্রবণকে বন্ধ করিয়াছে। যখনই স্বাধীন চিন্তা, বিচার শক্তি, ইত্যাদির হ্রাস হইয়া আইসে, চরিত্র-মধ্যে যখন স্বীয় অভিমত পোষণ করিবার ,সাহস চলিয়া যায়, তখন পরের গ্রাসে আহার করিবার প্রবৃত্তি বাড়িয়া উঠে। ফলতঃ এরূপ জীবন ইতর প্রাণীর জীবনাপেক্ষ অন্ন মাত্রই বিভি, কেন না, প্রাকৃতিক আদেশ প্রতিপালনই মানুষের একমাত্র লক্ষ্যের বিষয় নহে। .একটি গাভী প্রত্যুষ হইতে প্রদোষ পর্যন্ত ঘাস খায়, ক্লাস্ত হইয়া রাত্ত্বে বিশ্রাম করে, দিবসর্ভুক্ত নবতৃণাঞ্চুবু উদ্গীরণ ও রোমন্থন করে—স্বীয় বৎসকে স্তন্য দেয় ও যথাসম্ভব তাহাকে মানুষের অত্যাচার হইতে রক্ষা করিবার