পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৬
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

চিরদিনই মানুষ বলিয়া স্বীকার করে। যেদিন ইসলাম ধর্ম্ম গ্রহণ করা গেল সেইদিন বাদশাহ, ফকীর এক মস্‌জিদে উপাসনা করিতে অধিকারী হইল। হেয়, অবজ্ঞাত হইয়া কাহাকেও থাকিতে হয় না। সুশিক্ষা প্রাপ্ত হইলে ফকীরের পুত্রের ওম্‌রাহের দুহিতার পাণিগ্রহণেও কোন বাধা নাই। আমাদের দেশে গ্রামের পর গ্রাম ইস্‌লামের এই উদার আহ্বানে ধর্ম্মত্যাগী হইয়াছিল। প্রায় ৪০০ বৎসর পূর্ব্বে চৈতন্যদেব ধর্ম্মজগতে নূতন যুগ আনয়ন করিলেন। প্রেম ও ভক্তির যে বার্ত্তা লইয়া তিনি আসিলেন, তাহাতে কোন ভেদের কথা ছিল না। “চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠো হরিভক্তিপরায়ণঃ”। তাই দলে দলে লোক বৈষ্ণব ধর্ম্মের আশ্রয় গ্রহণ করিতে লাগিল। ফলে, বর্ত্তমানে আমরা দেখিতে পাই তথাকথিত নিম্নজাতিরা প্রায় সকলেই বৈষ্ণব। চৈতন্য যদি আবির্ভূত না হইতেন, তাহা হইলে ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থ এই ২৬ লক্ষ বাদে বোধ হয় সমস্ত দেশই মুসলমান হইয়া যাইত। এতবড় হিন্দু সমাজের এই ২৬ লক্ষ কতটুকু অংশ? হিন্দু সমাজের এই বৃহত্তর অবজ্ঞাত অংশ তথাকথিত নিম্নশ্রেণীর মধ্যে আমরা বেশী খ্যাতনামা ব্যক্তি যে দেখিতে পাই না, তাহার কারণ কোন সুযোগ বা সুবিধা ইহাদিগকে আমরা কখনো দিই নাই। কৃষ্ণদাস পাল ও মহেন্দ্রলাল সরকার প্রভৃতি ২।১ জন স্মরণীয় ব্যক্তির অবশ্য নামোল্লেখ করা যাইতে পারে। কিন্তু সমগ্র সমাজের তুলনায় ইহা ধর্ত্তব্যই নহে। হিন্দু সমাজ এই নিম্নশ্রেণীর উন্নতির পথ বন্ধ করিয়াই রাখিয়াছে—ফলে সমাজের বৃহৎ অংশই আজ সমস্ত জাতিকে পিছনে টানিয়া রাখিয়াছে। জাতীয় আন্দোলন আজ দেশের প্রধান আন্দোলন, কিন্তু এই আন্দোলনের সীমা কতটুকু পৌঁছিয়াছে? আমাদের দেশে জাতীয়তা মুষ্টিমেয় শিক্ষিত তথাকথিত উচ্চশ্রেণীর