১৮
ঘর সামলাও[১]
প্রায় আট বৎসর কাল আমি ইংলণ্ডে ছিলাম। এই ইউরোপ প্রবাসের কালে ৪ বার যাতায়াত করতে হয়েছে। গত ৩ বৎসরে ও মোটমাট ৪০ হাজার মাইল ভ্রমণ করেছি, গত তিন মাসেও আট হাজার মাইলের বেশী পর্য্যটন করেছি। আজ এই জীবনসন্ধ্যায় সকল বিষয় আলোচনা করবার স্পৃহা হয়। সকল শ্রেণীর লোকের সহিত আমি মেলামেশা করেছি, বোম্বাইর বহু ক্রোড়পতি হইতে সামান্য পর্ণকুটীরবাসী—সকলের সঙ্গেই সমান ভাবে মিশেছি। এক সময় নব জাগরণের উত্তাল তরঙ্গে সমস্ত ভারতবর্ষ প্লাবিত হয়েছিল। ঢেউতে নৌকার মাঝি যেমন উঁচুনীচু হয়, হাবুডুবু খায়, তেমনি আন্দোলন স্রোতে গা ভাসায়ে কত তোলপাড় খেয়েছি। আজকাল আমরা কেন, কিসের জন্য, পিছিয়ে পড়েছি? এর কারণ কি? প্রভঞ্জন-তুল্য প্রবল এত বড় আন্দোলন হঠাৎ এত শীঘ্র আকাশে বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণ কি?
সব আন্দোলনই ভাসা ভাসা—কোন আন্দোলনই আমাদের অন্তরতম প্রদেশে প্রবেশ করতে পারে না। বাঙালী বড় ভাবপ্রবণ। আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ,—‘লাগপড়’ হয়ে কোন বিষয় কাম্ড়ে থাকতে পারি না। আমাদের আবেগ উৎসাহ খড়ের আগুণের মত দপ্ করে জ্বলে’ উঠে’ অচিরেই আবার খপ্ করে নির্ব্বাপিত হয়ে যায়! কিছুরই চিহ্ন পর্য্যন্ত থাকে না।
- ↑ সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে ছাত্রসমাজের সমক্ষে আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্রের মৌখিক বক্তৃতার সার মর্ম্ম।