লোকের মধ্যে যা একটু শিক্ষার বিস্তার হয়েছে—তাও আবার শতকরা ৫ জন আর বাকী ৯৫ জন কোথায়?
ব্রাহ্মণ ও কায়স্থদের শিক্ষিতদের মধ্যে চট্টোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায় কিম্বা ঘোষ বসু গুহ মিত্র এই উচ্চ শ্রেণীর কুলীনের সংখ্যাই বেশী—ক্যালেণ্ডারে পাশের লিষ্ট খুঁজলেই আমার কথার সত্যতার প্রমাণ পাবেন। ১৩ লক্ষ ব্রাহ্মণের মধ্যেই বা আবার কতজন শিক্ষিত? পাড়াগাঁয়ে কত নিরক্ষর ব্রাহ্মণ ঘুরে বেড়ায়। বাংলা দেশে ৭২ ঘর কায়স্থ আছে। আম বেচা বরফ বেচা কত রকমেরই কায়েত আছে—‘জাত হারালেই কায়েত’। ব্রাহ্মণদের মধ্যেও রাঁধুনে, পূজারি, ভিখারী ব্রাহ্মণের অন্ত নাই। বামুন এবং ঠাকুর দুটো কথাই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু এই দুটী শ্রেষ্ঠ কথার সংযোগে একটা অদ্ভুত কথার সৃষ্টি হয়েছে—বামুন ঠাকুর। কথাটী শুনে আপনাদের হাসি পায় বটে কিন্তু আমার বুক ফেটে কান্না আসে। বাঁকিপুরে ১৭।১৮ বৎসর আগে একবার বক্তৃতা দিতে গিয়াছিলাম। তখন সেখানকার একজন প্রফেসর বলেছিলেন যে বেহারের অনুন্নত শ্রেণী হচ্ছে ব্রাহ্মণ। বিহার ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে দোবে, চোবে, তেওয়ারী প্রভৃতি উচ্চ শ্রেণীর ব্রাহ্মণেরা আমাদের দেশে কি সম্মান পান তা আপনারা জানেন। বাড়ীর দরওয়ান হয়ে খাটিয়া পেতে বসে থাকে, দিনান্তে ময়দা ঠেসে ছেকে চাপাটী করে খেতে বসে যায়। দোবে অর্থাৎ দ্বিবেদী, চোবে অর্থাৎ চতুর্ব্বেদী ব্রাহ্মণেরা আজ গরুর গাড়ীর গাড়োয়ান, কেহ বা স্বহস্তে লাঙ্গল চষে জীবিকা নির্ব্বাহ করে। বিহারের লালা কায়েতরা তাদের চেয়ে অনেক উন্নত—স্বর্গীয় সুন্দর লাল, পণ্ডিত নেহেরু, পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য প্রভৃতি কাশ্মীরি বা মালবীয় ব্রাহ্মণ—উত্তর পশ্চিম প্রদেশের ব্রাহ্মণদের স্থান কোথায়!