দেশে যখন কোন জাতীয় জাগরণ বা আন্দোলন আরম্ভ হয় তখন দেশের বণিককুলই অজস্র অর্থ সংগ্রহ করে’ সে আন্দোলনকে সজীব রাখে। পূর্ব্বে বলেছি গৃহবিপ্লবের সময় লণ্ডনের বণিকেরা বিপুল অর্থ সাহায্য করেছিল; ইংলণ্ডের বড় বড় সহরের বণিকেরা অজস্র অর্থ দিয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় অগ্রসর হয়েছিলেন। সব দেশেই জাতির নানা কাজে যখনই অর্থের প্রয়োজন হয়েছে তখনই বণিককুল অকাতরে দিয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যে রত সাহা, তিলি, গন্ধবণিক, মাড়োয়ারী প্রভৃতি সকলেই অজ্ঞান অন্ধকারে নিমগ্ন। আমার একটি মেধাবী ছাত্র প্রাণের আবেগে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপ দিয়েছিল—একটি জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করে’ দেহমন অর্পণ করে’ নগ্নপদে অস্থিচর্ম্ম সার হয়ে’ দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিল। তার কাছে শুনেছি যে টাকা তোলা দায়—লোকে এসব কাজে এক পয়সাও দিতে চায় না। অথচ,একজন বাবাজী এসে যদি আড্ডা গেড়ে বসে মহোৎসবের জন্য ঘি, ডাল, চা’লের এক লম্বা ফর্দ্দ দাখিল করেন তবে অনেক ধনী সওদাগর মহাজন গললগ্নীকৃতবাসে বল্তে থাকে “প্রভু, এ অধম আপনার কি উপকার কর্তে পারে—আপনার কোন্ কোন্ বিষয়ের ভার আমার উপর দিবেন?” বাবাজী হয়তঃ একসের গাঁজা— দাম ৮০ টাকা—ও মহোৎসবের বিবিধ উপকরণের এক ফর্দ্দ দেন। মহোৎসবে হাজার লোক খাওয়াতে হবে। সওদাগর মহাজনদের ভিতর এই সময় অর্থদান নিয়ে ভীষণ প্রতিযোগিতা চলে। প্রয়াগে কুম্ভমেলায় বড় বড় মোহান্ত স্বর্ণরৌপ্যখচিত সিংহাসনে বসে হাতীতে চড়ে বেড়ায়—অপার ঐশ্বর্য্যের অদ্ভুত আড়ম্বর। হায়! আমাদের দেশের ধনী সম্প্রদায় দেশহিতকর কাজে টাকা না দিয়ে কৃতাঞ্জলিপুটে স্বামীজি বা বাবাজি মহারাজের পায়ে সমস্ত নিবেদন করে। এতমণ ঘি, এতমণ
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৬৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘর সামলাও
৩৩৭