পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৬
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

হয়তঃ এককালে ছিল—এখন উহার মাহাত্ম্য একেবারে চলিয়া গিয়াছে। জানেন ত সেদিন প্রেসিডেন্সী কলেজের একটী promising চোখা ছেলে কোন তরুণীর প্রেমে পড়ে আত্মহত্যা করেছে—তথাকথিত শূদ্রশ্রেণী ও ব্রাহ্মণে বিয়ে হবে কি করে? “আলো ও ছায়া”র কবি বলিয়াছেন যে

“সংসারে দোহারে তাঁরা বাঁধিল হাতে হাতে।
বাঁধিতে নারিল তারা হৃদয় হৃদয় সাথে॥”

 বাঙালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহারের আলোচনায় বলেছি যে বঙ্কিমচন্দ্র বলিয়াছেন যে “অবনতাবস্থায়ও বঙ্গমাতা রত্নপ্রসবিনী”—রঘুনন্দন ও কুল্লুকভট্টের নাম করে বঙ্কিমচন্দ্র ঐ কথা বলেছেন। বঙ্গমাতা যে রত্ন প্রসব করেছেন সে রত্ন মনু, যাজ্ঞবল্ক, পরাশর প্রভৃতি মন্থন ও আলোড়ন করে নবম বর্ষীয়া বিধবা নির্জ্জলা একাদশী না করলে তার উর্দ্ধ ও অধঃ কয় পুরুষ নিরয়গামী হবে তার সমাধান করেছেন— কেহ বা কাকচরিত্র রচনা করেছেন—প্রাতে দুই দণ্ড দশ পল গতে নৈঋত কোণে কাক কা কা রব করলে সেদিন কি প্রকারে যাবে— কেহ বা পাত্রাধার তৈল না তৈলাধার পাত্র, তাল পড়িয়া ঢিপ করে না ঢিপ করিয়া তাল পড়ে এই সব অমোঘ তত্ত্বের মীমাংসায় ব্যস্ত রয়েছেন—ঠিক এই সময়েই ইউরোপে গ্যালিলিও, কেপলার, নিউটন প্রভৃতি মনস্বীগণ নব নব বৈজ্ঞানিকতত্ত্ব আবিষ্কারে ব্যস্ত ছিলেন।

 বঙ্গমাতা উপরোক্ত শ্রেণীর রত্ন যত কম প্রসব করবেন ততই দেশের মঙ্গল হবে। পৃথিবীর বৈঠকে ভাতরবাসীর স্থান কোথায়? প্যারিয়াকে যেমন আমরা কুকুর বিড়াল অপেক্ষাও অধম করিয়া ইতর অন্ত্যজ পঞ্চম শ্রেণীভুক্ত করে’ রেখেছি, তেমনি সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপই যেন পৃথিবীর বৈঠকে আমরা এক ঘরে হয়ে আছি। তাই