একপ্রকার অসাধ্য হইয়া উঠিয়াছে আমার ছেলেবেলায় অর্থাৎ পঞ্চাশ ষাট বছর পূর্ব্বে বাঙ্গালীর ঘরে গোয়ালভরা দুগ্ধবতী গাভী ছিল, আর এখন দেখা যায় অতি অল্প গৃহস্থেরই ঘরে গো-পালনের ব্যবস্থা আছে এবং গরুর খাদ্যের সুবন্দোবস্ত নাই বলিয়া সাধারণতঃ এক একটা গাভী আধ সের তিন পোয়া মাত্র দুধ দেয়। ইহারা কঙ্কালসার ও ক্ষুধাতুর। নিজের বাছুরকেই বা কি দিবে, এবং গৃহস্থকেই বা কি দিবে? আমার মনে হয় শীঘ্রই এমন আইন প্রচলন হওয়া দরকার, যাহাতে প্রত্যেক গ্রামে যথেষ্ট পরিমাণ গো-চারণের মাঠ সুরক্ষিত থাকে।
এই যে প্রায় পাঁচ কোটি বাঙ্গালী—ইহারা এবং ইহাদের শিশুগণ কতটুকু দুধ খাইতে পারে? দুধই সর্ব্বাঙ্গ সুন্দর খাদ্য (A Perfect Food) অর্থাৎ ইহাতে শরীর গঠনের যাবতীয় উপাদান বিদ্যমান। শৈশবে ও বার্দ্ধক্যে দুগ্ধই প্রধান খাদ্য হওয়া উচিত। এই যে আজ বাঙ্গালীজাতির এই প্রকার শারীরিক অবনতি ও দুর্ব্বলতা তাহার প্রধান কারণ দুগ্ধের ন্যায় পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব। আর মাছের তো কথাই নাই। সর্ব্বত্রই দেখিলাম একটাকা পাঁচসিকার কমে সের মিলে না। বিশেষতঃ এবার পদ্মায় ইলিশ মাছেরও দুর্ভিক্ষ।
বাঙ্গালী আজ তাহার উদর শাকপাতা ডাটা প্রভৃতি কদর্য্য দ্রব্যে পরিপূর্ণ করে। অর্থাৎ, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে (raalnutrition) বাঙ্গালী জাতির সর্ব্বনাশ হইতেছে। আর এই যে ম্যালেরিয়া আষ্ঠেপৃষ্ঠে তাহাকে বাঁধিয়া ফেলিয়াছে, তাহারও প্রধান কারণ, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে তাহার resisting power বা রোগ বাধা দিবার ক্ষমতা হ্রাস পাইয়াছে। বারান্তরে বাঙ্গালী জাতির ঘোর দারিদ্র্যের বিষয় বলিবার বাসনা রহিল।