নিজে সর্ব্বদাই নূতন পয়রা গুড়ের (আমাদের এখানে মৌঝোলা গুড় বলে), তৈয়ারী মুড়ির চাক্তী বড় টিনের কোঁটায় মচমচ অবস্থায় সংরক্ষিত করি এবং প্রত্যহ উপাদেয় বলিয়া আহার করি। “ডাব” “দুম্যো” ও “ঝুনা” নারিকেল খাদ্য হিসাবে মূল্যবান্। আমি স্বয়ং এইগুলির রাসায়নিক বিশ্লেষণ (Chemical analysis) করিয়াছি। ইহাদের শাঁসে তৈলাক্ত পদার্থ প্রচুর আছে। বাঙ্গালীর ঘরে এখন ঘি একপ্রকার দেখাই যায় না, আর তৈলও যাহা ব্যবহার হয় তাহা কলের। কিন্তু এই নারিকেল কোরায় যথেষ্ট তৈলাক্ত উপকরণ বিদ্যমান; এমন কি ইহাকে ঘৃতের বিনিময় (Substitute) বলা যায়। নারিকেল কোরা গালিয়া যে ‘দুধ’ বাহির হয় তাহাতে আমড়া দিয়া উত্তম অম্বল তৈয়ার হয় এবং নারিকেলের যে সমস্ত মেঠাই—রসকরা, চন্দ্রপুলি যেমন মুখরোচক তেমনি খাদ্য হিসাবে পুষ্টিকর। অবশ্য এখনও পাড়াগাঁয়ে ইহার চলন আছে, কিন্তু সহরের শিক্ষণ ও সভ্যতাভিমানী বাঙ্গালী-যুবকগণের কপাল পুড়িয়াছে; তাহারা ডাবের জলটুকু খাইয়া আসল জিনিষটা ফেলিয়া দেন; এমন যে সুন্দর ‘নেওয়াপাতি’ তাহা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। এই প্রকারে দেখা যায় কলিকাতার এক একটা ডাবের দোকানে স্তুপীকৃত ছেঁদা করা ডাব গড়াগড়ি যাইতেছে। এমন রুচির বিকার হইয়াছে যে, ডাব কাটিয়া তাহার শাস খাইলে পাছে লোকে ছোটলোক বলে এই ভয়ে আসল জিনিষটুকু খাইতে সাহস হয় না। হায়রে বাঙ্গালী! তুমি কি কুগ্রহের পাকে সকলই হারাইতে বসিয়াছ।
নারিকেলের প্রস্তুত মিঠাই খাওয়া এখন সহরে এক প্রকার ফ্যাসন বিরুদ্ধ হইয়া দাঁড়াইয়াছে এবং ঘৃতপক্ক নানাবিধ খাবার না হইলে চলে না। এই ‘ঘৃত’ যে কি তাহা বলাই বাহুল্য। ইহাতে খাঁটি ঘৃত