২১
চা—পান না বিষপান?
জিলা খুলনার দক্ষিণাংশের নদ-নদীতে এক প্রকার মৎস্য দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার নাম ‘গাগড়া’। জনসাধারণ এই মৎস্যকে ‘হাবা’ বলিয়াও অবিহিত করিয়া থাকে। এই শ্রেণীর মৎস্যের বিশেষত্ব এই যে, এই মৎস্যের সম্মুখে টোপ ফেলিলেই উহারা টোপ দর্শনমাত্রেই গিলিয়া ফেলে, বিন্দুমাত্র ভাবনা-চিন্তা বা দ্বিধা বোধ করে না। আমার মনে হয়, সমগ্র বাঙ্গালী জাতি এই ‘হাবার’ মত ‘হাবা’ নামে অভিহিত হইবার উপযুক্ত; কেন না, বিদেশীয়—বিশেষতঃ ইংরাজ বণিকের টোপ দর্শনমাত্রে গিলিতে অভ্যস্ত জাতি, বাঙ্গালীর মত ভূভারতে দ্বিতীয় নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। কেন, তাহা বুঝাইতেছি।
এ দেশে ইংরাজ বণিকদিগের নানা কাজকারবার আছে, তন্মধ্যে চা-বাগিচার বাণিজ্য অন্যতম। যে চা-বাগিচায় আড়কাঠিরা কুলী চালান করে এবং এদেশের কুলীরা যে সকল চা-বাগিচায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া বাগিচার শ্রীবৃদ্ধিসাধন করে, অথচ যাহার ফলভোগ করে বিদেশীয় ইংরাজ বণিক, সেই সকল চা-বাগিচা ধনসম্পদের আকরভূমি—এক একটা ক্ষুদ্র রাজ্য বলিলেও হয়। ইংরাজ বণিক এমন অনেক চা-বাগিচা এদেশে গড়িয়া তুলিয়াছেন। এগুলি বৃহদায়তন জমিদারীবিশেষ। দার্জিলিঙ্গ, জলপাইগুড়ি ও আসাম প্রভৃতি অঞ্চলে এই জমিদারীগুলি অবস্থিত। এই সকল চা-বাগিচা হইতে বৎসরে কোটি কোটি মুদ্রার চা দেশবিদেশে রপ্তানী হইয়া থাকে। কিন্তু আকাঙ্খার তৃপ্তি নাই, ঘৃতাহুত হুতাসনের মত উহা ক্রমশঃই বর্দ্ধিত