পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৮
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

নির্দ্ধারণ করিলেন। এই সেস্ সংগ্রহের ফলে সরকারী তহবিলে কয়েক লক্ষ টাকা জমিতে লাগিল। টাকাটার সদ্ব্যবহার হইতেও বিলম্ব হইল না। Tea Association বা যুরোপীয় চা-কর সমিতি এই অর্থসাহায্যের ফলে কলিকাতা সহরের মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান খুলিলেন এবং পরার্থে দধীচির অস্থিদানের ন্যায় বিনামূল্যে জনসাধারণকে অমূল্য চা-সুধা বণ্টন করিতে লাগিলেন। তৃষ্ণার্ত্ত পথিক বিনামূল্যে সুধাপান করিয়া শ্রান্তদেহে স্ফুর্ত্তি ও সজীবতা আনয়ন করিল। এ দিকে,এক পয়সার প্যাকেট চা বিনামূল্যে জনসাধারণের মধ্যে বিতরিত হইতে লাগিল। এই পরোপকারী বণিক জাতি এইরূপে এ দেশে চা-রূপ অপরূপ টোপ ফেলিলেন, আর ‘হাবা’ মাছের ন্যায় হাবা বাঙ্গালী জাতি সর্ব্বাগ্রে ছুটিয়া গিয়া কোঁৎ করিয়া সেই টোপ গিলিয়া ফেলিল! সেই জাতি শেষে চায়ে এমন নেশাখোর হইয়া উঠিল যে, গুরু ইংরাজকেও সে নেশার বিদ্যায় পরাজিত করিল।

 নেশার এই একটা লক্ষণ যে, সময়মত নেশার জিনিষ না পাইলে হাই উঠিতে থাকে, গা গুলাইয়া উঠে, গা-গতোর ভাঙ্গিয়া পড়ে, মন অস্থির ও চঞ্চল হইয়া উঠে! আফিমখোর যতই দরিদ্র হউক না, তাহার ওক্তমত পরিমিত প্রমাণ অহিফেনের বড়ি- বা গুলী পাইবার জন্য করিতে না পারে, এমন দুষ্ক্রিয়া জগতে নাই। অনেকে পোষা পাখীকে সরিষা বা তিল পরিমাণ অহিফেন খাওয়াইতে শিখান। এই পাখীকে পিঞ্জর হইতে মুক্ত করিয়া দিলেও, সে আকাশে-বাতাসে যথেচ্ছ বিচরণ করিয়া বেড়াইলেও নিয়মিত সময়ে অহিফেন সেবনের জন্য পিঞ্জরে ফিরিয়া আসিবেই। যতক্ষণ তাহার প্রভু তাহার বরাদ যোগান না দেন, ততক্ষণ সে ছট্‌ফট্‌ করিতে থাকে। নেশার এমনই মহিমা!