পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার

 বাস্তবিক সুশ্রুতে বৌদ্ধ মতের ভূরি প্রমাণ পাওয়া যায়। ইহাতে শবব্যবচ্ছেদের সুন্দর নিয়মাবলী এবং প্রত্যক্ষ প্রমাণ ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করিবে না, এমন উপদেশ দৃষ্ট হয়। অষ্টাঙ্গ-হৃদয়-প্রণেতা বাগভটও বৌদ্ধ ছিলেন; পাছে হিন্দুরা তাঁহার মত্ অগ্রাহ্য করেন এই বুঝিয়া এক স্থানে শ্লেষ বা ব্যঙ্গচ্ছলে বলিয়াছেন—

 “যদি ঋষি প্রণীত বলিয়াই গ্রন্থবিশেষ শ্রদ্ধেয় হয়, তবে কেবল চরক ও সুশ্রুত অধীত হয় কেন? ভেল প্রভৃতি আয়ুর্ব্বেদীয় তন্ত্র এক প্রকার বর্জ্জিত হইয়াছে কেন? অতএব কেবল গ্রন্থনিবিষ্ট বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া সেই গ্রন্থের সারত্ব সম্বন্ধে বিচার করা উচিত।”

 পরবর্ত্তী স্থলে আবার বলিতেছেন, “ঔষধের গুণ লইয়াই যখন কথা, ব্রহ্মা স্বয়ং প্রয়োগ করুন বা অপর কেহ প্রয়োগ করুন তাহাতে ক্ষতি নাই।”

 মহাত্মা নাগার্জ্জুন কর্ত্তৃক এতদ্দেশে রসায়নী বিদ্যার যে প্রভুত উন্নতি সাধিত হইয়াছিল, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। চক্রপাণি বলেন, তিনি যে লৌহ-রসায়ন ব্যবস্থা করিতেছেন, তাহা নাগার্জ্জুন কর্ত্তৃক প্রথম বিবৃত হইয়াছিল। রসেন্দ্রচিন্তামণিকারের মতে তিনিই রাসায়নিক তির্য্যক্‌পাতন প্রক্রিয়ার আবিষ্কর্ত্তা।

 প্রাচীন ভারতে কেবল যে দর্শন ও সাহিত্য উন্নতির পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত হইয়াছিল এমন নহে! আয়ুর্ব্বেদ, জ্যোতিষ, গণিত ও রসায়ন শাস্ত্রেরও বিশেষ আলোচনা হইয়াছিল। এখন প্রশ্ন হইতেছে, এ সমস্ত বিদ্যা কি প্রকারে লোপ পাইল? কেহ কেহ বলেন মুসলমান আধিপত্যে রাজাগণ শ্রীভ্রষ্ট ও বিধ্বস্ত হওয়াই ইহার প্রধান কারণ, কিন্তু তৎসাময়িক ইতিহাস পাঠে এই যুক্তি সারগর্ভ বলিয়া বোধ হয় না। মুসলমানদিগের আর্য্যাবর্ত্ত জয়ের অনেক পুর্ব্ব হইতেই হিন্দুদিগের এই অনুসন্ধিৎসা বৃত্তির