পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭০ আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী হিসাবে মদিরাও খাদ্যসার। যে হেতু, এক গেলাস গলাধঃকরণ করিয়া কত লোক কত রকম স্কুকর্ম্ম-কুকর্ম্ম করিয়া ফেলিতে পারে । চা-ও এই শ্রেণীর খাদ্য । যিনি একবার চায়ের মোহিনী / শক্তিতে বশীভূত হইয়াছেন, তাহার আর নিস্তার নাই । সময় মত চায়ের পেয়াল না পাইলে প্রাণ অস্থির হইয় উঠে, মন চঞ্চল হয়, কাজে ‘আঠা লাগে না । যে গৃহস্থ-গৃহে একবার এই মোহিনীর প্রবেশলাভ ঘটয়াছে, সে গৃহের আর মঙ্গল নাই। গৃহের আবালবৃদ্ধবনিতা নিত্য দুইবেল চায়ের জন্য ধরনা দিয়া থাকে। এমন কি, কোনও কোনও গৃহে দুগ্ধপোষ্য শিশুরা ও চায়ের নেশায় বিভোর হইতে শিখিতেছে । আক্ষেপের কথা, পিতামাত বা অভিভাবকরা ইহা দেখিয়াও সর্ব্বনাশের প্রতীকার সাধনে উদ্যোগী হইতেছেন না! বরং অনেক অভিভাবক এই নেশায় অভ্যস্ত হইতে বাড়ীর ছেলেমেয়েকে প্রশ্রয় দিয়া থাকেন । এক পিয়ালা চায়ে সারবান পদার্থ কিছুই নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না । হোমিওপ্যাথিক ডোজে কয় ফোটা দুধ ও একটু চিনি থাকে বটে, কিন্তু উহাকে পুষ্টিকর খাদ্যের মধ্যে গণ্য করা যায় না । আমি বোম্বাই সহরে দেখিয়াছি যে, পথে পথে যেখানে ‘বিশ্রান্তি-ভবন আছে, সেখানে আফিসের কেরাণী বাবুর প্রত্যুষে ৭টায় আফিসে যাইবার পথে এক কাপ চ পান করিয়া লইয়৷ উৰ্দ্ধশ্বাসে অফিসে ছুটেন । আবার অফিসের কাজে অৰসাদ বা ক্লাস্তি আসিলেই “বিশ্রান্তি-ভবনে’ দৌড়াইয়া যান। তাহারা দিনে এইরূপ ৪৫ বাম চাপান করিয়৷ থাকেন। র্তাহাদের কৈফিয়ং এই,--“আমর। গরীব কেরাণী, ক্ষুধা পায়, খাই কি ? চা খাইলে ক্ষুধা মরিয়া যায়।” কি সর্ব্বনাশকর অধোগতি ! ক্ষুধামান্দ্যই যেন প্রার্থনীয় ! এই চা যে অগ্নিমান্দ্য, অজীর্ণতা বা ডিসপেপসিয়ার মূল কারণ, তাহ বলাই বাহুল্য ।