হিসাবে মদিরাও খাদ্যসার। যে হেতু, এক গেলাস গলাধঃকরণ করিয়া কত লোক কত রকম সুকর্ম্ম-কুকর্ম্ম করিয়া ফেলিতে পারে। চা-ও এই শ্রেণীর খাদ্য। যিনি একবার চায়ের মোহিনী শক্তিতে বশীভূত হইয়াছেন, তাঁহার আর নিস্তার নাই। সময় মত চায়ের পেয়ালা না পাইলে প্রাণ অস্থির হইয়া উঠে, মন চঞ্চল হয়, কাজে ‘আঠা’ লাগে না। যে গৃহস্থ-গৃহে একবার এই মোহিনীর প্রবেশলাভ ঘটিয়াছে, সে গৃহের আর মঙ্গল নাই। গৃহের আবালবৃদ্ধবনিতা নিত্য দুইবেলা চায়ের জন্য ‘ধরনা’ দিয়া থাকে। এমন কি, কোনও কোনও গৃহে দুগ্ধপোষ্য শিশুরাও চায়ের নেশায় বিভোর হইতে শিখিতেছে। আক্ষেপের কথা, পিতামাতা বা অভিভাবকরা ইহা দেখিয়াও সর্ব্বনাশের প্রতীকার সাধনে উদ্যোগী হইতেছেন না! বরং অনেক অভিভাবক এই নেশায় অভ্যস্ত হইতে বাড়ীর ছেলেমেয়েকে প্রশ্রয় দিয়া থাকেন।
এক পিয়ালা চায়ে সারবান্ পদার্থ কিছুই নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না। হোমিওপ্যাথিক ডোজে কয় ফোঁটা দুধ ও একটু চিনি থাকে বটে, কিন্তু উহাকে পুষ্টিকর খাদ্যের মধ্যে গণ্য করা যায় না। আমি বোম্বাই সহরে দেখিয়াছি যে, পথে পথে যেখানে ‘বিশ্রান্তি-ভবন’ আছে, সেখানে আফিসের কেরাণী বাবুরা প্রত্যুষে ৭টায় আফিসে যাইবার পথে এক কাপ চ পান করিয়া লইয়া উর্দ্ধশ্বাসে আফিসে ছুটেন। আবার আফিসের কাজে অবসাদ বা ক্লান্তি আসিলেই ‘বিশ্রান্তি-ভবনে’ দৌড়াইয়া যান। তাঁহারা দিনে এইরূপ ৪/৫ বার চা পান করিয়া থাকেন। তাঁহাদের কৈফিয়ৎ এই,—“আমরা গরীব কেরাণী, ক্ষুধা পায়, খাই কি? চা খাইলে ক্ষুধা মরিয়া যায়।” কি সর্ব্বনাশকর অধোগতি! ক্ষুধামান্দ্যই যেন প্রার্থনীয়! এই চা যে অগ্নিমান্দ্য, অজীর্ণতা বা ডিসপেপসিয়ার মূল কারণ, তাহা বলাই বাহুল্য।