অধুনা হাটে-বাজারে, পথে-ঘাটে, তটে-বাটে, রেলে-ষ্টীমারে, যেখানে যাও, দেখিবে, চায়ের ডিপো বা চায়ের কলসী। কেবল বাবুরা নহে, চাকর-বাকর, মুটে-মজুর, গাড়োয়ান-কোচম্যান,—সারেঙ্গখালাসী সকলেই চায়ের নেশায় ক্রীতদাস হইয়া উঠিতেছে। চতুর ইংরাজ বণিক দূরে দাঁড়াইয়া মুচকিয়া হাসিতেছে, আর মজা উপভোগ করিতেছে—‘হাবা’ কেমন টোপ গিলিয়াছে! বাঙ্গালাদেশে যত চা উৎপন্ন হয়, তাহার শতকরা ৯৭ ভাগ ইংরাজ বণিকের চা-বাগিচায় তৈয়ার হয়, মাত্র ৩ ভাগ দেশীয়রা উৎপন্ন করে। অর্থনীতির দিক্ দিয়া দেখিলেও বুঝা হায়, ইহাতে কোন জাতির সর্ব্বনাশ হইতেছে। যে ভাবে বাঙ্গালী হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে চা প্রসারলাভ করিতেছে, তাহাতে মনে হয়, মার ৫/৭ বৎসরের মধ্যেই গ্রাম্য কৃষকগণও লাঙ্গল চষিতে চষিতে চায়ের পিয়ালায় চুমুক না মারিলে জমীর পাট করিতে পরিবে না। যদি ৩০ কোটী ভারতবাসীর এক-পঞ্চমাংশও চায়ের বশীভূত হয়, ৬ কোটী ভারতবাসী যদি অন্যূন এক পয়সাও চায়ের জন্য নিত্য খরচ করে, তাহা হইলে প্রত্যেকে মাসে ৮ আনা এবং বৎসরে ৬ টাকা—এই হিসাবে বৎসরে ৩৬ কোটী টাকা ইংরাজ বণিকের পকেট পূর্ণ করিবে। ইহাও ভারতের এক-পঞ্চমাংশ লোকের হিসাব মাত্র, ইহার অধিক লোক যে চা খায় না, তাহা বলা যায় না; পরন্তু প্রত্যেকে এক পয়সাই যে চায়ের জন্য ব্যয় করে-তাহার অধিক ব্যয় করে না, তাহারই বা স্থিরতা কি?
এই চা-পানে বাঙ্গালী জাতির স্বাস্থ্যের যে কি সর্ব্বনাশ হইতেছে, তাহাও পরে বুঝাইবার চেষ্টা করিব। এই প্রবন্ধে খাদ্য-সমস্যার অবতারণা করা হইল মাত্র।