যে ঝগড়া, ইহার কারণ গৃঢ়তর—মনোবৃত্তিমূলক। আজ যদি আমরা প্রকৃত প্রস্তাবে দেশকে তুলিবার জন্য বদ্ধপরিকর হইতাম, তাহা হইলে অগ্রে এই বিপুল জনসংঘকে আমাদের সহিত একতাসূত্রে আবদ্ধ করিতাম, তাহাদিগের অভাব-অভিযোগে কর্ণপাত করিতাম। কিন্তু তাহাদের সহিত আমাদের একেবারে ফারখৎ!
এই সাতক্ষীরা ও সদর মহকুমার লবণাক্ত অঞ্চলের বড়ই দুর্দ্দশা। এখানকার মালিক অসংখ্য; এই জন্য মিলিয়া মিশিয়া বাঁধ-বন্দী সুচারুরূপে হয় না। এই কারণে নোণা জল ঢুকিয়া অনেক ক্ষেত্র পর পর অজন্মাগ্রস্ত হইয়া থাকে। কেবল বরুণদেবের উপর নির্ভর করিয়া থাকিতে হয়; ষোল আনা ফসল ত এক প্রকার উপন্যাসের কথা হইয়াছে। ২/৪ বৎসর অন্তর ৮ আনা ৬ আনা ফসল জন্মিয়া থাকে। এই কারণে জমীদার, গাঁতিদার, প্রজা সকলেই দুর্দ্দশাগ্রস্ত। এই দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র উপজীবিকা আমন ধান্য। এই জন্য এই অঞ্চলকে একফসলী বলা যায়। যদি ফসল না হইল, তাহা হইলেই হাহাকার। অনেক লোকের মাদুর বুনিয়া কোন রকমে গ্রাসাচ্ছাদনের সংস্থান হয়। কিন্তু ইহাও বঙ্গদেশের একটা প্রাকৃতিক নিয়ম দেখিতে পাই, যে অঞ্চলের লোক যতই অভাবগ্রস্ত, সে অঞ্চলের লোক আবার ততই অলস ও উদ্যমশূন্য। এই ‘একফসলী’ অঞ্চলে বছরে ৯ মাস লোকের কোন প্রকার কাজকর্ম্ম থাকে না। কিন্তু ইহারা অযথা এই সময় আলস্যে যাপন করে। ইহাদের ভিতর যদি এমন কোন গৃহশিল্প প্রবর্ত্তন করা যায়, যাহাতে এই অবসরকালে কিছু কিছু রোজগার করিতে পারে, তাহা হইলে দুঃখ-দৈন্যের অনেক উপশম হয়। তাঁত ও চরকা স্থানে স্থানে প্রচার করিয়া অনেক অর্থ ব্যয় করা গিয়াছে; কিন্তু দুঃখের সহিত জানাইতে হইতেছে যে, আমাদের প্রচেষ্টা তাদৃশ সফলতা লাভ করে