আর্য্যকুলগৌরব মহাতপা তেজস্বী ব্রাহ্মণ নহেন। তৎপরিবর্ত্তে একদল অযোগ্য স্বার্থপর লোক সমাজে আবির্ভূত হইয়া, পূর্ব্বোক্ত মহাপুরুষগণের পবিত্র নামের দোহাই দিয়া, সমাজের নেতৃত্বভার গ্রহণ করিয়াছিল এবং স্বকীয় জাতির মহিমা হারাইয়া, কেবল এক গুচ্ছ শ্বেতসূত্র বা যজ্ঞোপবীতের দোহাই দিয়া, সমাজের শাসন বিষয়ক স্মৃতি, পুরাণ ইত্যাদি কতকগুলি গ্রন্থ রচনা করিয়াছিল। এই সকল গ্রন্থের মূল উদ্দেশ্য কেবল ব্রাহ্মণ জাতির মহিমা কীর্ত্তন অর্থাৎ স্বার্থপর ব্রাহ্মণনামধারী প্রভুগণের আধিপত্য বিস্তার ও জীবিকা নির্ব্বাহ!
বস্তুতঃ ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য কুসংস্কারের এক অতি বৃহৎ অধ্যায়। অনুসন্ধান-প্রবৃত্তি একপ্রকার লুপ্তপ্রায় হইল। যাহা কিছু বৈজ্ঞানিক আভাস জাতীয় শিক্ষা ও জ্ঞানের সহিত ধীরে ধীরে ফুটিয়া উঠিতেছিল, যে কিছু প্রাকৃতিক দর্শন ইত্যাদির আলোচনার আভাস সূচিত হইতেছিল, তাহা অত্যল্প কালেই বিনষ্ট হইবার পথে আসিল। এই বিলোপের কারণ শাস্ত্রকারগণের কঠোর আদেশ। মৃতদেহ স্পর্শ করিলে অশৌচ হয়, মনু এই ব্যবস্থা করিয়া বসিলেন, সুতরাং শব-ব্যবচ্ছেদ বিজ্ঞান হইতে তিরোহিত হইল[১]। কেবল যদি শরীর ব্যবচ্ছেদ নিষেধ করিয়া ক্ষান্ত হইতেন, তাহা হইলেও আমরা আজ তাঁহাদের নিকট কৃতজ্ঞ হইতাম। সমুদ্র-যাত্রা পর্য্যন্ত ধর্ম্ম-বিগর্হিত কার্য্য বলিয়া নিদ্দিষ্ট হইল। হিয়ান্সেংএর ভ্রমণ বৃত্তান্তে জানা যায়, তিনি যখন তাম্রলিপ্ত (তম্লুক) হইতে সিংহল যাত্রা করেন এবং সিংহল হইতে স্বদেশ প্রত্যাবর্ত্তন করেন, তখন অনেক ব্রাহ্মণ বণিক তাঁহার সহযাত্রী ছিলেন। শুধু ইহাই নহে, এক সময়ে হিন্দুদের অর্ণবপোত অগাধ বারিধি অতিক্রম করিয়া বলি ও যাবাদ্বীপে উপনিবেশ স্থাপন করে। এই সকল স্থানে ভগ্নাবশেষ
- ↑ See “History of Hindu Chemistry”, P. 193.