কঠোর তাড়নায়, জাত্যভিমান কুলমর্য্যাদা ইত্যাদির অসহনীয় কশাঘাতে উন্মত্ত হইয়া বাঙ্গালার বহুসংখ্যক লোক ইস্লামধর্ম্মের আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাধ্য হইল। অবশ্য কৌলীন্যের প্রতিষ্ঠাতাগণের সংকল্প ভাল হইতে পারে, কিন্তু যে দিন হইতে কুল ব্যক্তিগত গুণগ্রামের পুরস্কার স্বরূপ না হইয়া বংশানুগত হইল সেই দিন বাঙ্গালীর অধঃপতনের চূড়ান্ত হইল। দেবীবর ঘটক আসরে অবতীর্ণ হইলেন। বংশমর্য্যাদা রক্ষার জন্য “কুলজী” প্রভৃতি গভীর গবেষণা পূর্ণ শাস্ত্রের সৃষ্টি হইল। এই প্রকার শৃঙ্খল পরিয়া বাঙ্গালী নবদ্বীপের ব্যবস্থাশাসন দ্বারা নিজের আট ঘাট বাঁধিয়া এমন করিয়া বসিলেন যে, ভাবী উন্নতির আর কোন পন্থা রহিল না। এইপ্রকার কৃত্রিম অনৈসর্গিক বিধান সকল যখন সৃষ্ট হইল, প্রকৃতি দেবী তাঁহার নিয়ম লঙ্ঘন হেতু ভীষণ প্রতিশোধ লইলেন। কুলমর্য্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখিবার জন্য বহুবিবাহরূপ কীট সমাজহৃদয়ে প্রবিষ্ট হইয়া তিল তিল করিয়া কাটিতে লাগিল। আজ বর্ত্তমান বাঙ্গালা সেই পরিণাম ভোগ করিয়া হীনবীর্য্য হইয়া পড়িয়াছে। কৌলিন্যের সেই বিষময় ফল আজ বাঙ্গালার প্রতি গৃহে প্রবিষ্ট হইয়া যে সুবৃহৎ বিষতরু সংবর্দ্ধন করিয়াছে, হায়, পরিশ্রান্ত ভারাক্রান্ত গৃহস্থ সেই বিষতরুর উৎকট জ্বালাময়ী ছায়ায় দাঁড়াইয়া আজ ত্রাহি ত্রাহি ডাকিতেছে!
এই ভ্রান্ত কৌলিন্য, তৎপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজ বিভাগ, উত্তররাঢ়ী, দক্ষিণরাঢ়ী, বারেন্দ্র, বঙ্গজ প্রভৃতি সৃষ্ট হইয়া যে দেশের কি ভয়ানক অকল্যাণ সাধন করিয়াছে ও করিতেছে আজ বিংশ শতাব্দীর উন্নত স্তরে দাঁড়াইয়া তাহা পরিষ্কার প্রতীয়মান হইতেছে। আমি তোমার কন্যার পাণিগ্রহণ করিব না, আমি তোমার অন্ন গ্রহণ করিব না, আমি তোমার আমন্ত্রণ গ্রহণ করিলে সমাজ হইতে বহিষ্কৃত হইব ইত্যাদিবৎ বৈষম্য যে কি অনিষ্টসাধন করিয়াছে ও করিতেছে তাহা বিজ্ঞ কেন, যে কেহই