করিয়া জ্বলিয়া উঠিল—কর্ম্মক্ষম হইয়াও বাঙ্গালী স্বাধীন ব্যবসার দ্বারা স্বাধীন জীবিকা অর্জ্জন করিতে অক্ষম হইয়া পড়িলেন। ইত্যবসরে গুজরাট, রাজপুতনা (বিকানীর) ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলবাসিগণ ঝাঁকে ঝাঁকে আসিয়া সমস্ত ব্যবসা দখল করিতে লাগিলেন, আর বাঙ্গালী ধ্রুবতারার ন্যায় কেরাণীগিরি লক্ষ্য করিয়া ইংরাজী শিখিতে লাগিলেন। সুতরাং উচ্চশিক্ষার অভিমানে জ্বলিয়া পুড়িয়াও ২০৲। ২৫৲ টাকার কেরাণী বৃত্তিতেই জীবন যাপন বাঙ্গালী যুবকের চরম পুরস্কার নির্দ্ধারিত হইল। এই প্রকারে ইংলণ্ডের রাজলক্ষ্মীর অনুগামী হইয়া বাঙ্গালী কেরাণী পঞ্জাব হইতে ব্রহ্মদেশ পর্য্যন্ত ছড়াইয়া পড়িল, আর কিসে চাকুরী ‘বাগাইব’, মস্তিষ্কের প্রখরতা উহাতেই ব্যয়িত হইতে লাগিল। বস্তুতঃই উদরের উৎকট চিন্তা বাঙ্গালীর মনুষ্যত্ব পর্য্যন্ত কাড়িয়া লইয়াছে। সাধারণ সরলতা ও সাহসিকতা পর্য্যন্ত হৃদয় হইতে উৎপাটিত হইয়াছে, এখন বুদ্ধির প্রাখর্য্য ঘৃণিত চাটুকারিতায় ও ততোধিক ঘৃণিত কপটতায় দৃষ্ট হইতেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে শুনিয়াছি মফঃস্বলে কোন ইংরাজ জজের প্রিয়তমা পত্নীর বিয়োগ হয়। এই নববিবাহিতা পত্নীর বিয়োগজনিত নিদারুণ শোক অপনোদন করিবার নিমিত্ত উক্ত জজ মহাশয় প্রতিদিন নির্দ্দিষ্ট সময়ে মৃত পত্নীর কবর সন্নিহিত হইয়া নির্জ্জনে অশ্রুপাত করিতেন। তদ্দর্শনে একজন সুচতুর উমেদার বুঝিল, এই উপযুক্ত সময় উপস্থিত। সে পরদিবস কিছু অগ্রে যাইয়া ভেউ ভেউ করিয়া কৃত্রিম কান্না কাঁদিতে লাগিল ও সজোরে বক্ষে করাঘাত করত, “মা আমার চলিয়া গিয়াছেন”, “আর আমায় কে পালন করিবে” ইত্যাদিবৎ চীৎকার করিতে লাগিল। বলা বাহুল্য, রাজপুরুষ অচিরে এই সহানুভূতির পুরস্কারের ব্যবস্থা করিলেন। বস্তুতঃ চাকুরী যাহাদের উপজীবিকা হইয়া দাঁড়াইয়াছে, তাহাদের আত্মসম্মান জ্ঞান আদৌ নাই বলিলেও
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী