ক্ষুন্নিবৃত্তি করিতে বাধ্য, জঠরানলের প্রবল তাড়নায় (হায়, সে মর্ম্মান্তিক দৃশ্য!) জননী নিজে সন্তানের গ্রাস কাড়িয়া খাইয়াছেন! এই দুর্ভিক্ষের, এই ভীষণ দৈন্যের জন্য দায়ী কে? আমার মনে হয়, প্রথমতঃ বিশেষ ভাবে আমরা, দ্বিতীয়তঃ বৈদেশিক বাণিজ্য। এই বৈদেশিক বাণিজ্য আমাদেরই অপদার্থতার সুযোগ পাইয়া আমাদিগকে কাঙ্গাল সাজাইয়াছে—ইহাতে বৈদেশিক বণিকের দোষ কি? কেন বিলাতী পণ্যে বাজার পূর্ণ করিলাম, কেন বিদেশী শিল্পের হাতে আপনার দেহ ঢালিয়া দিলাম। সে ত আমাদেরই দোষ, সে ত আমাদেরই অভিরুচির অবশ্যম্ভাবী ফল। কেন স্বদেশজাত শিল্পের আদর শিখিলাম না, কেন দেশের শিল্পের উন্নতিকল্পে, কল্পনার সুখশয্যা ছাড়িয়া কোমর বাঁধিয়া নামিতে শঙ্কিত হইলাম! আপনার পায়ে আপনি কুঠার মারিয়া প্রতিবেশী অস্ত্রনির্ম্মাতার অপবাদ করিলে কি হইবে?
আজ সমস্ত ভারতের আমদানী ও রপ্তানি ধরিলে প্রায় ৩৪৪ কোটি টাকা হইবে। এই অন্তঃ ও বহির্বাণিজ্যের কোন ক্ষুদ্র ভগ্নাংশও কি বাঙ্গালী ব্যবসায়ী বা বণিকের হাত দিয়া যায়? আমরা পশ্চিমপ্রদেশীয় ভ্রাতাদিগের কার্য্যকুশলতা ও ব্যবসায়-তৎপরতায় হিংসাপরবশ হইয়া, তাঁহাদিগকে অর্দ্ধশিক্ষিত “মেড়ুয়া,” “ছাতুখোর” কিংবা ততোধিক কোন প্রীতিকর অভিধানে ঘোষিত করিয়া থাকি, কিন্তু বস্তুতঃ ইঁহারাই আজ বাঙ্গালার ব্যবসায়ী—ইঁহাদেরই নিকট আমাদের শিখিতে হইবে। ব্যবসায় বাণিজ্যে বিদ্যাধ্যায়ীর ন্যায় না শিখিলে কখনও কর্ম্মক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করা যায় না। ইহা এমনই বিষয় যে, হাতে করিয়া না দেখিলে ও না শিখিলে কখনও সম্যক উপলব্ধি হয় না। দেশে এক, ধুয়া উঠিয়াছে যে চাকুরী পরিত্যাগ পূর্ব্বক ব্যবসায় আরম্ভ করিতে হইবে। আজ কাল প্রায় সকল যুবকই বলিয়া থাকেন “ভাল চাকরী না পাই দোকান