পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার
২৯

ফলে অনভিরুচির ন্যায়, অথবা দুর্ব্বলের ক্ষমাশীলতার ন্যায় উপহাসের বিষয় মাত্র। বালককাল হইতে যে দেশের যুবক পিতা মাতা গুরুজনের নিকট রৌপ্যখণ্ডের মধুর নিনাদের বার্ত্তা শুনিয়া আইসে, যে দেশের বিবাহ ক্রয় বিক্রয়ের নামান্তর মাত্র হইয়া দাঁড়াইয়াছে, যে দেশের ভর্ত্তার ভালবাসা শ্বশুরপ্রদত্ত বিত্তের পরিমাপক স্বরূপ বলিলেও অত্যুক্তি হয় না, ইহাই যে দেশের সমাজের ছবি— সে দেশের আদর্শ “আধ্যাত্মিক” বলিয়া যদি কোন শাস্ত্রব্যাখ্যাতা পণ্ডিত অথবা সমাজের নেতা বড়াই করেন, জানি না পিশাচবৃত্তি কাহাকে বলে! বাস্তবিক বাঙ্গালীর ন্যায় অর্থোপাসক জাতি আর কুত্রাপি নাই। ইংলণ্ড, জার্ম্মানী, ফ্রান্স আজ ঐশ্বর্য্য-শালিনী সন্দেহ নাই, বাণিজ্য শত ধারে ঐ সকল দেশে সম্পদরাশি ঢালিতেছে বটে, কিন্তু এই অর্থাগম সত্ত্বেও জ্ঞানস্পৃহার কিঞ্চিৎ মাত্র হ্রাস পরিলক্ষিত হয় না। কস্তুতঃ উহারাই সরস্বতীর প্রকৃত উপাসনা করিতেছেন। অনন্যমনে জ্ঞানান্বেষণই যেন উহাদের অর্থ লাভের হেতু বলিয়া অনুমিত হয়। এই জ্ঞানান্বেষণের ফলে নূতন নূতন তত্ত্ব উদ্ঘাটিত করিয়া, প্রকৃতির শক্তি-সাহায্যে পাশ্চাত্যদেশবাসিগণ পার্থিব জগতে যুগান্তর উপস্থিত করণে সক্ষম হইয়াছেন, আর আমাদের মৃতকল্প স্বাস্থ্যবিহীন যুবকগণ—কেবল এক্‌জামিনের পর এক্‌জামিন পাশ করিয়া যাইতেছে—বাস্তবিক, এক্‌জামিন পাশ করিবার নিমিত্ত এমন হাস্যোদ্দীপক উন্মত্ততা পৃথিবীর কুত্রাপি দেখিতে পাওয়া যায় না। পাশ করিয়া সরস্বতীর নিকট চিরবিদায় গ্রহণ—শিক্ষিতের এরূপ জঘন্য প্রবৃত্তিও আর কোন দেশে নাই। আমরা এদেশে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করিয়া জ্ঞানী ও গুণী হইয়াছি বলিয়া আত্মাদরে স্ফীত হই, অপরাপর দেশে সেই সময়েই প্রকৃত জ্ঞানচর্চ্চার কাল আরম্ভ হয়, কারণ সে সকল দেশের লোকের জ্ঞানের প্রতি যথার্থ অনুরাগ আছে;