যদি তোমরা কল্পনার চক্ষে দেখিতে পাইতে, যাহাদিগকে তোমরা সামান্য কারণে সমাজচ্যুত করিয়া অশেষ কষ্টে নিপাতিত করিয়াছিলে, তাহাদিগের ক্লিষ্ট আত্মা তোমাদিগকে শাপ দিয়াছিল “যেমন আমাদিগকে সামান্য অপরাধে জাতিচ্যুত করিতেছ, তেমনই তোমাদেরই বংশধরগণ রেলে, পুলিসে ও অন্যান্যবিধ দাসত্বে জীবন যাপন করিয়া আমাদিগের অপেক্ষা শত গুণে অধিক পাপী হইয়া তোমাদের কুলে কালি দিবে!” আর বিধাতাও তাহাদের বাক্যে বলিয়াছিলেন, “স্বস্তি”! বাস্তবিকই এই ভীষণ নিয়ম-জাল আর একটা মহা অপকার করিয়াছে। মদ্যপান নিবারণী সভায় “মদ্যপান করিব না” বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিয়া লোকে যদি পরে মদ্যপান করিতে আরম্ভ করে, তবে সে শুধু যে মদ্যপানজনিত অপরাধই করে তাহা নহে, প্রতিজ্ঞাভঙ্গ-জনিত পাপে তাহার চরিত্র আরও বেশী অধোগতি প্রাপ্ত হয়। তাই ঐ সকল নিয়মের ফলে আজকাল বাঙ্গালী সমাজে ভীষণ মিথ্যাচারের প্রবর্ত্তন হইয়াছে এবং এই মিথ্যাচারের দ্বারা কোন জাতিই উন্নতিলাভ করিতে পারে না।
বংশপরস্পরাগত সংস্কার, যাহা আবহমান কাল চলিয়া আসিতেছে তাহা বর্জ্জন করিতে হইলে যথেষ্ট সাহস ও ত্যাগ স্বীকারের আবশ্যক। তুমি যদি সমাজের মতে মত না দিয়া চল তাহা হইলে সমাজ তোমার পৃষ্ঠে বেত্রাঘাত করিবে। মধ্যযুগে ইউরোপে যাঁহারা নূতন ধর্ম্মপ্রচার করিতেন তাঁহাদের পোড়াইয়া মারা হইত। কোমল স্বভাবসম্পন্ন হিন্দু অবশ্য সমাজ সংস্কারককে পোড়াইয়া মারে না বটে, কিন্তু বুদ্ধির জোরে নানা কূট উপায় অবলম্বন পূর্ব্বক তাহাকে যথেষ্ট নিগৃহীত করে। তুমি যদি সমাজের আদেশ অগ্রাহ্য কর (তা সে আদেশ যতই কেন অন্যায় হউক না) তাহা হইলে তোমায় “একঘরে” হইতে হইবে—তোমার ধোপা নাপিত বন্ধ হইবে, তোমার বাড়ী কেহ জলগ্রহণ করিবে না,