ও শারীরিক দাসত্ব উভয়ই জাতীয় উন্নতির সমান অন্তরায়, যাঁহারা এদেশের মনের উপর ইংরাজী ভাবের দাসত্ব আনিতে চাহেন বা যাঁহারা এদেশের মনের উপর সংস্কৃত ভাবের দাসত্ব আনিতে চাহেন, তাঁহারা উভয়েই ভ্রান্ত। হারবার্ট স্পেনসার বা শঙ্করাচার্য্য বলিয়াছেন বলিয়াই কোন কথা মানিয়া লইতে হইবে তাহা নহে। নিজের যুক্তি ও বিচারের দ্বারা উহার যাথার্থ্য প্রমাণিত হইলেই তবে তাহা গ্রহণ করিতে হইবে। ইহাই স্বাধীনচিন্তার মূল সূত্র। ভারতবর্ষে পুনরায় স্বাধীন চিন্তা ও স্বাধীন আচার প্রবর্ত্তিত হউক। উহা মাঝে মাঝে ডোবার পঙ্কিল দুর্গন্ধ জল আনিয়া দেয় বটে, কিন্তু মন্দাকিনীর পূত বারিধারাও উহা হইতেই আসিবে,—আর কিছু হইতে নহে।
এই দীর্ঘ প্রবন্ধে নিম্নলিখিত কথা কয়টি স্পষ্ট করিবার প্রয়াস পাইয়াছি, সে বিষয়ে কতদূর কৃতকার্য্য হইয়াছি বলিতে পারি না। মস্তিষ্কের প্রাখর্য্যে বাঙ্গালী জাতি পৃথিবীর আর কোনও জাতির অপেক্ষা নিকৃষ্ট নহে। দুর্ভাগ্যক্রমে, যে পথে এই শক্তি নিয়োজিত করিলে নানা সূফল প্রসব করিত সে পথে ইহার নিয়োগ হয় নাই। তাই জগতের সমক্ষে বাঙ্গালী জাতির কীর্ত্তি নিদর্শন স্বরূপ দেখাইবার অতি অল্প বিষয়ই আছে। মুসলমান শাসনকালে এই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবৃত্তি ন্যায়ের নিষ্ফল কূটতর্কে ও স্মৃতির জটিল ও স্থানে স্থানে হাস্যোদ্দীপক বিধি ব্যবস্থা প্রণয়নে ও প্রচলনে ব্যয়িত হইয়াছিল, সত্যানুসন্ধানে ব্যবহৃত হয় নাই। আবার ইংরজি শাসনকালে, কেরাণীর লেখনীচালনে এবং উকিলের অনাবশ্যক বাকবিতণ্ডায় এই দুর্লভ শক্তি নিঃশেষ হইয়া যাইতেছে। কিন্তু আশা করি, কুসংস্কারাচ্ছন্ন পথভ্রান্ত বঙ্গদেশে স্বাধীনচিন্তার ও সত্যানুরাগের নির্ম্মল স্রোত আসিয়াছে, বঙ্গীয় যুবক জাগ্রত হইতেছে। জঘন্য দাসত্বের পরিবর্ত্তে কোন কোন কর্ম্মকুশল যুবক ব্যবসা ও বাণিজ্যে ধনাগমের