পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার
৩৯

 “কলেজের শিক্ষাকে নিন্দা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু আমি বলিতে চাই যে সওদাগর ও কারখানাওয়ালাগণ মূর্খ নহেন এবং তাঁহারা যে কেবল অদৃষ্টের জোরে বা অসদুপায়ে কৃতকার্য্য হইয়াছেন এ কথাও ঠিক নয়। একজন কৃতী ব্যবসাদার হইতে হইলে অনেক জ্ঞান, গভীর চিন্তা ও পরিশ্রমের আবশ্যক। আর এক কথা; যদি কাহারও পরে বিজ্ঞান বা সাহিত্য সম্বন্ধে গবেষণা করিবার ইচ্ছা না থাকে,তাহা হইলে তাহার পক্ষে উচ্চ কলেজী শিক্ষা গ্রহণ কেবল সময়ের অপব্যবহার মাত্র। যদি জীবিকা উপার্জ্জনের জন্যই কাজ করিতে হয়, তাহা হইলে নিজের কাজের সঙ্গে যাহার সম্পর্ক নাই এমন জিনিষ শিখিবার প্রয়োজন নাই।”

 “বহুকাল হইতে লোকে বলিয়া আসিতেছে যে কলেজী শিক্ষা পাইলে প্রণালীবদ্ধ ভাবে চিন্তা করা যায়। আমি বলি রীতিমত ব্যবসা শিক্ষা করিলেও সেই ফল লাভ হয়, উপরন্তু ইহাতে এমন সব জিনিষ শিক্ষা করা হয় যাহা প্রতিদিন কাজে লাগে। ব্যবসাদারের পক্ষে বিজ্ঞান জানা আবশ্যক, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক যে সব বে-দরকারী জিনিষ শিখান হয় তাহার কোনও প্রয়োজন নাই। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সব জিনিষ শিখান হয় যাহার ফলে লোকে জীবনসংগ্রামে যোগ্যতা দেখাইতে পারে তাহা হইলে বিশ্ববিদ্যালয় মানবজাতির যথার্থ উপকার করিবে এবং দেশের উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধির সহায়তা করিবে। আজকাল কিন্তু দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় হইতে যাঁহারা বাহির হন তাঁহাদের মস্তিষ্ক ব্যাকরণ ও অনান্য শাস্ত্রের নানা বে-দরকারী বিষয়ে একেবারে বোঝাই হইয়া গিয়াছে। তাঁহাদের বিদ্যার যথেষ্ট ভড়ং থাকে বটে এবং তাঁহাদের কথাবার্ত্তার খুব জলুসও থাকে, কিন্তু নিজের বা পরিবারের সম্যক্ ভরণ পোষণে তাঁহারা একেবারেই অক্ষম। এই নিয়মের ব্যতিক্রম অতি অল্পই দেখা যায়।”