পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্নসমস্যা
৪৫

সওদাগরগণ তাঁদের কার্য্যসিদ্ধি করতে পার্‌তেন না। এই জন্যই রামদুলাল দে, মতিলাল শীল প্রভৃতি ক্রোড়পতি হয়েছিলেন! কিন্তু এখন ব্যবসার ক্ষেত্র থেকে বাঙ্গালী হটেছে, বিতাড়িত হয়েছে। বর্ত্তমানে কল্‌কাতার জনসংখ্যা যত তার একতৃতীয়াংশ বাঙালী, অথচ কল্‌কাতা বাংলার প্রধান সহর। এই সহরে যেসব অ-বাঙালী স্থানে প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ টাকার কার্‌বার হয় সেখানে বাঙালীকে ক্বচিৎ দেখতে পাওয়া যায়। অত্যাশ্চর্য্য ব্যাপার! ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয়! এদেশে ইংরেজী শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল—সহজে চাক্‌রী জুট্‌বে। পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে বাঙালী যে পরিমাণে ইংরেজী শিক্ষায় অগ্রসর হতে লাগল চাকরীর মোহ তার সেই পরিমাণে বেড়ে গেল। তারপর যখন ডেপুটি-কালেক্টরী মুন্সেফী প্রভৃতি পদের সৃষ্টি হল এবং গবর্ণমেণ্ট আফিসে অল্পাধিক বেতনের কেরানীগিরির দ্বার উন্মুক্ত হল তখন দশ পনের বৎসর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার এক চরম উদ্দেশ্য হয়ে দাড়াল শীঘ্র শীঘ্র পাশ করে এইরূপ একটা পদ লাভ করা। ক্রমে ইংরেজীনবীশ বঙ্গযুবকেরা কেরানী, উকীল, মাষ্টার ডাক্তার হয়ে উত্তর ভারতবর্ষের সর্ব্বত্র ছড়িয়ে পড়ল, মনে ভাব্‌লে এই নূতন শিক্ষা দীক্ষা ও সাহেবিয়ানার চক্‌চকানি নিয়ে তারা না জানি কোন্ দিগ্বিজয়ে বাহির হয়েছে! কিন্তু কেউ তখন বুঝ্‌লে না যে বিপদের মেঘ ঘনীভূত হয়ে উঠছে। এদিকে অবসর বুঝে তখন উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ বিশেষতঃ মাড়বার থেকে একদল লোক “লোটাকম্বল” মাত্র সম্বল করে কল্‌কাতায় এসে আপন পুরুষকারের বলে, অক্লান্ত চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের সহায়তায় বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্য হস্তগত করে নিলে। বাঙালীর মুখে তখন ইংরেজি বুলি আর অন্তরে মাড়োয়ারির প্রতি ঘৃণা,তারা অসভ্য ছাতুখোর! কিন্তু ইংরেজিশিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী বা ছাপ এ