দাদন দিয়ে পাটের কারবার একচেটে করে নেয়? সে মাড়োয়ারী, আর্ম্মিনিয়ান, আর ইংরেজ। ইংরেজ সোজা চাষার বাড়ী যায়, মিষ্টি কথা বলে, তাঁর ছেলেপুলের সঙ্গে খেলে ও তাদের খেলনা দেয় আর স্বকার্য্য সাধন ক’রে আসে। জমিদাররা কি চেষ্টা ক’রে এত বড় ব্যবসাটা আপন হাতে রাখতে পারেন না? একেবারে কিছু রেলিব্রাদার্স্ হওয়া যায় না; কিন্তু আত্মচেষ্টায় আস্তে আস্তে হতে পারা যায় ত’ বটে। পাটের সময় অনেক নিরক্ষর চাষী বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাট নিয়ে নিকটবর্ত্তী আড়তে যোগান্ দিয়ে এসে তিন চার মাসের মধ্যে ১০০০৲। ১২০০৲ টাকা রোজগার ক’রে নেয়।
মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকের দুরবস্থার কথা আর কি বল্ব। যাঁরা পূর্ব্ববাংলার খবর রাখেন তাঁরা জানেন সেখানে মাছ কিন্তে গেলে জেলেরা বলে—“বাবু, সন্ধ্যার পর ঝড়তি পড়তি নিয়ে যাবেন।” দুর্দ্দশার একশেষ! ঈর্ষার কথা বলছি না, মাড়োয়ারী যদি লোটা ছাতু সম্বলে লক্ষ টাকা আনেন, বাংলার পাট থেকে রোজগার ক’রে যদি ইংরেজ কলওয়ালা টাকার আণ্ডিলে গড়াগড়ি দেন, তা হ’লে বাংলায় জন্মগ্রহণ করে বাংলার আবহাওয়ায় মানুষ হ’য়ে বাঙালী আমরা কিছু কর্তে পারি না?
আর একটা ক্ষুদ্র ঘটনার উল্লেখ করি। পদ্মায় অজস্র ইলিশ মাছ জন্মায়; কিন্তু দাদন দিয়ে জেলেদের নিকট থেকে সেই মাছ সংগ্রহ করবার এবং বরফ ঢাকা দিয়ে কলকাতায় পাঠাবার ভার বিদেশীর হাতে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত হ’য়ে নিদ্রাসুখ ভোগ কর্ছি আর লাভের টাকা অপরে লুট্ছে। এইরূপে সকল দিকে আমাদের কর্ম্মক্ষেত্রের পরিসর গুটিয়ে আস্ছে। টাকা ত পড়ে আছে, কিন্তু আমাদের নেবার শক্তি নেই। কি দারুণ লজ্জা!