পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

একটা সঙ্কটকাল উপস্থিত হয়েছে যে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক—সকলেরই এই কথাগুলি বিশেষ ক’রে অনুধাবন করে দেখা উচিত।

 স্বদেশী আন্দোলনের ফলে এ দেশে কতকগুলি কলকারখানা স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ডিগ্রীধারীগণ পশ্চাতে ছিলেন; কোন কৃতিত্ব দেখাতে পারেন নি। তাঁরা কলের মত, কলুর চোখঢাকা বলদের মত। বিদ্যাশিক্ষার ফলে তাঁরা কেরানীগিরির যোগ্যতা লাভ করেন— নিজের চেষ্টা উৎসাহ ও বুদ্ধির বলে কিছু কর্‌বার সাহস বা শক্তি ছাত্র-জীবনেই তাঁরা হারিয়ে বসেন। বর্ত্তমানে ব্যবসায়-ক্ষেত্রে যে সকল বাঙালী সফলতা লাভ, করেছেন তাঁদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ধারই ধারেন না। স্যর্ রাজেন্দ্রনাথ, জে সি ব্যানার্জ্জি, কয়লাখনির স্বত্বাধিকারী এন্ সি সরকার, রেলওয়ে ট্রাফিকের এস্ সি ঘোষ—এ’রা উপাধির ধার ধারেন না। জে সি ব্যানার্জ্জির কৃতিত্ব বাঙলাদেশ ছাড়িয়ে বোম্বাই-পুনা প্রভৃতি স্থানে পৌঁছেছে। সেখানে এখন এককোটি টাকার কণ্টাক্ট তাঁর হাতে। বাঙ্গালীর বোম্বাই-প্রদেশে এই প্রথম প্রতিষ্ঠা; আমাদের পক্ষে এ বড় গৌরবের কথা! গতানুগতিকের গণ্ডী ভেঙে বাঁধা পথ ছেড়ে নূতন পথে পা ফেলে এবং উদ্যম ও অধ্যবসায়ের বলে সফলতায় মণ্ডিত হয়ে এঁরা আমাদের যুবকের সম্মুখে অন্নসংস্থান ও দারিদ্র্যনিবারণের একটা নূতন পথ উন্মুক্ত ক’রে দিয়েছেন। আমাদের ছেলেরা পাশ না কর্‌তে পার্‌লেই মাথায় হাত দিয়ে ব’সে পড়ে—বলে, হায় হায় জীবনটা মাটি হয়ে গেল! আরে, জীবন মাটী হয় তো ঐখানেই ঐ একটানা এক বাঁধাপথে, যা বৈচিত্র্যে সুন্দর নয়, যেখানে আশার আলোকপাত হয় না, যেখানে শুধু দারিদ্র্যের অশ্রু—ভাবনা বেদনা ও কর্ম্ম-পঙ্গুত্ব। ৩০ বৎসরের বাঙালী যুবক সংসারজ্বালায় জর্জ্জরিত, চক্ষু নিষ্প্রভ, মুখে আনন্দচিহ্ন