নেই; দুশ্চিন্তাগ্রস্ত—মেয়ে সেয়ানা হচ্চে বিয়ে দিতে হবে—বরের বাজার আগুন। কিন্তু জীবনের প্রারম্ভে যাঁরা সফলতার মুখ দেখেছেন সেই ইংরেজ ও মাড়োয়ারীকে দেখ—কত স্ফূর্ত্তি, কত আশা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে পাঁচ বছরে আমাদের যুবকের ডিগ্রী ও চাকরীর মোহ ঘুচে যায়, ব্যর্থতা ও বিফলতা তাকে ঘিরে ধরে, অবসাদহিমে ডুব্তে ডুব্তে যৌবনেই তার জীবনগ্রন্থি শিথিল হয়ে পড়ে, অকালবার্দ্ধক্যের চিহ্ন দেখা যায়। তাই বলি, প্রথম বয়সে আশা উৎসাহ ডিগ্রী নেবার চেষ্টায় নিঃশেষ ক’রে না দিয়ে আত্মচেষ্টার উপর নির্ভর ক’রে বেরিয়ে পড় দ্রব্যসম্ভারপূর্ণ প্রকাণ্ড এই দেশে, যেখানে ছয়শোকোটি টাকা মূল্যের দ্রব্য প্রত্যেক বৎসরে আম্দানী-রপ্তানি হচ্ছে। এই প্রকাণ্ড ব্যবসায়-ব্যাপারের সব মুনাফা ইংরেজ, জর্ম্মান্, জাপানী প্রভৃতি বিদেশীরা এবং ভারতের ভাটিয়া, দিল্লীওয়ালা, মাড়োয়ারী প্রভৃতি বণিকগণ নিজেদের মধ্যে বণ্টন ক’রে নেয়।
বাঙলা দেশের প্রধান সহর কল্কাতার বাসিন্দাদের শতকরা ৩৫ জন বাঙালী নয়। ইংরেজ, জাপানী, চীনা এবং হিন্দুস্থানী মাড়োয়ারী প্রভৃতি কল্কাতার সর্ব্বত্র বসতি বিস্তার করেছেন। ছোটখাট শ্রমসাধ্য কার্য্যগুলি পর্য্যন্ত বাঙালীর হাতছাড়া হয়ে গেছে। যুদ্ধের সময় মাড়োয়ারী অজস্র টাকা লাভ করেছেন। কলকাতার ব্যবসায়ে তাঁদের কোটী কোটী টাকা খাট্ছে। উদ্বৃত্ত টাকায় তাঁরা বড় বড় জমিদারী কিন্তে আরম্ভ করেছেন; শীঘ্রই মাড়োয়ারী বণিক্ কল্কাতার সব বাড়ীর মালিক হবেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর বাঙলাদেশে বাঙালী আমরা হতাশ হয়ে, নিরুপায় হয়ে বসে আছি। আমাদের এখন উঠে পড়ে লাগতে হবে, এই ভয়ঙ্কর অন্নসমস্যার মীমাংসা কর্তে হবে। যে শিক্ষায় শুধু মেরুদণ্ডহীন গ্রাজুয়েট তৈরী হয়, মনুষ্যত্বের সঙ্গে পরিচয় হয়