পাতা:আজকের আমেরিকা.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজকের আমেরিকা
৬৫

উত্তাপে। দূর হতে মনে হয় যেন আগুন লেগেছে। পন্‌চম অ্যাভেনিউ এবং একশত দশ স্ট্রীট ইস্ট যেখানে মিলেছে সেখানে দাঁড়ালাম সেণ্টাল পার্কের কাছে। আলোকোজ্জ্বল সুন্দর পথ, তারই উপর অগণিত মোটর গাড়ি ও বাস চলছে। যারা ‘জ্যয় রাইড’ করতে বের হয়েছে দোতলা বাসে, তাদের হাসির ফোয়ারার উচ্চ কলরবে আকাশ মুখরিত। কাছেই বড় বড় হোটেলে মদের বোতলের ছিপি খোলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সুন্দরী তরুণীর কলহাস্য আনন্দের সৃষ্টি করছে। যুবক যুবতী আপন মনে পথ চলেছে এবং সারাদিনের পরিশ্রমের অবসাদ দূর করছে। তারা কখনও ছোট ছোট রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে লাইট রিফ্রেশমেণ্ট খেয়েই বের হয়ে পড়ছে। প্রতি মুহূর্তটিকে যেন তারা আনন্দে ভরিয়ে তুলছে। কাছেই একটা সিনেমা গৃহে নাচ চলছে। আমেরিকায় একদিকে চলেছে ঐশ্বর্যভোগের আয়োজন আর এক দিকে রয়েছে নিরন্ন বেকার ও ক্ষুধিতের ব্যর্থ জীবনের করুণ দৃশ্য। কিন্তু ঐ যে দৃশ্য আমার সামনে, তা দেখে মনে হয় না আমি আমেরিকার কোথাও ভ্রমণ করছি মনে হয় শ্রদ্ধানন্দ পার্কে বসে আছি। শ্রদ্ধানন্দ পার্কের চারিদিকে সর্বহারা দল বাস করে তার সংবাদ কেউ রাখে না। যাঁরা সেই সংবাদ রাখেন তাঁরা আসুন আমার আমেরিকায় বর্ণিত স্থানে। দেখবেন এখানেও সর্বহারার দল নতমুখে বসে আছে। কেউ সারাদিনে এক টুকরা রুটি খেয়েছে, আর কেউ অভুক্ত অবস্থায়ই পথের দিকে চেয়ে বসে আছে। আমেরিকার ব্যাংকে প্রচুর স্বর্ণ আছে, বাগানে ফল আছে, মাঠে প্রচুর গম আছে, নদীতে জল আছে, দোকানে কাপড় জুতা সবই আছে কিন্তু ঐ ভিখারীদের কিছুই নাই। পরনে ছেঁড়া ট্রাউজার, গায়ে ছেঁড়া কোট, কারও গায়ে শার্ট আছে, কারও গায়ে তাও নেই! নেকটাই কিন্তু তবুও ঝুলছে।