পাতা:আজ কাল পরশুর গল্প.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ জ কা ল প র শু র গ ল্প

 মানুষ জমেছে কয়েকজন। একজন, কোমরে তার গামছা-পরা আর মাথায় কাপড়খানা পাগড়ীর মতো জড়ানো, হঠাৎ জোরে হেসে ওঠে। একজন বলে, 'বাঃ বাঃ বেশ।' একজন ঊরুতে থাপড় মেরে গেঁয়ো ভঙ্গিতে হাততালি দেয়।

 একটু তফাতে নালা পোরোবার জন্য পাতা তাল গাছের কাণ্ডটার এ মাথায় বসেছিল গদাধর, বহু দূরের মানুষকে হাঁক দেবার মতো জোর গলায় এমনি সময়ে সে ডাকে, 'গিরির মা। বলি ওগো গিরির মা!'

 গিরির মা মুখ ফিরিয়ে তাকাতে সে আবার বলে তেমনি জোর গলায়, 'গিরি যে তোমায় ডাকছে গো গিরির মা কখন থেকে! শুনতে পাও না?'

 গিরির মা থমকে যায়, দুঃস্বপ্ন-ভাঙা মানুষের মতো ক্ষণিক স্বম্বিৎ খোঁজে বিমূঢ়ের মতো, তারপর যেন চােখের পলকে এলিয়ে যায়।

 'ডাকছে? অ্যাঁ, ডাকছে নাকি গিরি? যাইলো গিরি, যাই!'

 এতগুলি মানুষ দেখে লজ্জায় সে জিভ কাটে। কোমরে এক-পাক জড়ানো ছেঁড়া কাঁথাখানা চট করে খুলে নিয়ে মাথায় ঘোমটার মতো চাপিয়ে এগিয়ে যায় ঘরের দিকে।


ঘরের সামনে পুরোনো কাঁঠাল গাছের ছায়ায় বসে রামপদ সবে হুঁকোয় টান দিয়েছিল। তামাক সেজেছে একটুখানি, ডুমুর ফলের মতো। তামাক পাওয়া বড় কষ্ট। মুক্তাকে সাথে নিয়ে ওদের আসতে দেখে সে হুঁকোটা গাছে ঠেস দিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায়। এমনিই পুড়ে যেতে থাকে তার অত কষ্টে যোগাড় করা তামাক।