পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার টাকার বড় দরকার। সুতরাং কাগজপত্র দেখিয়া বলিলাম, আপীল দাখিল করিব, কিন্তু ২৫ পারিশ্রমিক লাইব । মওয়াকেল সম্মত হইয়া ষ্টাম্প কিনিতে গেল ; কিন্তু আজও গেল, কালও গেল। আমার মুহুরীকে অনুসন্ধান করিতে বলিলাম। মুহুরী আসিয়া বলিল, অমুক উকীল ২০ টাকায় করিয়া দিব বলিয়া তাহাকে ভাঙ্গাইয়া লইয়াছে। শুনিয়া আমার বিজাতীয় ঘুণা হইল। এক ব্যক্তি নিজের মকদ্দমা নিজে আমার কাছে আনিয়াছিল অর্থাৎ তাহার সঙ্গে মোক্তার ছিল না। মোক্তার থাকিলে আমি ২০ কি ২৫ টাকায় বেশী পাইতাম না। কিন্তু মোক্তাৱ নাই দেখিয়া সুবিধা বুঝিয়া কোপ করিয়াছিলাম, ২৫, টাকার স্থলে ১২৫ টাকা লইয়াছিলাম। বুঝিয়েছিলাম। এ ব্যবসায়ের প্রলোভন বড়। এ ব্যবসায় দরিদ্রের পক্ষে মারাত্মক । আমি দরিদ্র । এ ব্যবসায় ছাড়িয়া দেওয়া কর্ত্তব্য বিবেচনা করিলাম। এ সকল কথা ভাবিতে ভাবিতে স্বৰ্গীয় কৃষ্ণদাস পালের কথা মনে হইল। তঁহার একখানি চিঠির জোরে আমি ডিপুটী মেজেস্টারী পাইলাম। পাইয়া ঢাকায় গেলাম। যখন যাই, বঙ্কিমদাদা আমাকে বলিলেন,--যাইতেছ। যাও, কিন্তু টিকিতে পরিবে না । টিকিতে পারিও নাই। দেখিয়াছিলাম, হাকিম পুলিসের আজ্ঞাবহ ভূত্যস্বরূপ । পুলিসের মনোমত জেল জরিমানা না করিলে, কর্তৃপক্ষের অসন্তোষ ভাজন হইবার সম্ভাবনা। একটা মোক দমায় পুলিস আমাকে শাসাইয়া এক ব্যক্তিকে দণ্ডিত করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, সে চেষ্টা অন্যায় না হইয়া থাকিতে পারে। কিন্তু পুলিসের আচরণ যে নিতান্ত অসভ্য, অসম্মানজনক ও উদ্ধত হইয়াছিল, তাহাতে আমার সন্দেহ ছিল না । আমি মেজেস্টর সাহেবের কাছে পত্র লিখিয়া stiftet Rfosfosfat i fSfå folf Cole,–I see no reason to interfere i আমি বুঝিলাম, পুলিসের মন যোগাইয়া চলিতে না পারিলে ডিপুটিগিরি করিমে, পাৱা কঠিন। ডিপুটিগিরি ছাড়িয়া দিলাম। এইবারে স্বৰ্গীয় ন্যায়রত্ন মহাশয়ের কথা আমার মনে উঠিল। ঢাকা হইতে কলিকাতায় আসিবার পূর্বেই তিনি আমাকে জয়পুর কলেজের অধ্যাক্ষের পদ গ্রহণ করিবার জন্য অনুরোধ কৰিয়াছিলেন । কলিকাতায় আসিয়া জয়পুরে গেলাম। পথখরচের জন্য জয়পুর হইতে একশত টাকা আসিল। কিন্তু তাঁহাতে সপরিবারে অত দূর যাওয়া হয় না। পত্নীকে কলিকাতায় রাখিয়া যাইতেও পারিব না। আবার দেনা করিয়া সপরিবারে জয়পুর গেলাম। সেখানে কাস্তিবাবু আমার বড়ই আদর যত্ন করিয়াছিলেন, বলিয়াছিলেন আমাকে খুব বড় করিবেন। তা তিনি করিতে পারিতেন। তিনি তখন জয়পুরের রাজা বলিলেই হয়। Conscience টাকে একটু মুচড়াইয়া ৫/৭ বৎসর থাকিলে আমি মন্ত ধনী হইয়া যাইতাম। কিন্তু জয়পুরের তাত আমার সহ হইল।